জনবহুল রাস্তার মধ্যেই তিন তরুণীর হাত ধরে টানাটানি করছে তিন যুবক। চেষ্টা হচ্ছে ওড়না কেড়ে নেওয়ার। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেই তরুণীদের মারধর শুরু করল ওই যুবকেরা। সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ।
বুধবার ভর সন্ধ্যায় ব্যস্ত রাস্তার মধ্যে এই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন আশেপাশের দোকানদাররা। কয়েকজন এগিয়েও গিয়েছিলেন কী হয়েছে দেখতে। কিন্তু বিভিন্ন অসামাজিক কাজে অভিযুক্ত এলাকার ওই ছেলেদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে কেউই সাহস দেখাচ্ছিলেন না। সেই সময়ই স্থানীয় এক দোকানদার প্রতিবাদ করে রুখে দাঁড়াতেই তরুণীদের ছেড়ে দিয়ে চলে যায় মোটরবাইক আরোহী ওই যুবকেরা। অভিযোগ, তখনকার মতো চলে গেলেও রাতে বাড়ি ফেরার সময় ওই দোকানদারের উপর হামালা চালায় ওই যুবকেরা। দোকানমালিককে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়ে খুনের চেষ্টা করা হয়। তবে অল্পের জন্য তাঁর কোনও আঘাত লাগেনি।
এমনই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার সালকিয়ায়। ঠিক একবছর আগে এই সালকিয়ায় ইভটিজিং-এর প্রতিবাদ করায় দুষ্কৃতীদের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন অরূপ ভাণ্ডারি। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্য। মৃত যুবকের বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা। সিআইডি তদন্তের পাশাপাশি পরিবারের একজনকে চাকরি দিয়েছিল তৃণমূল সরকার।
কিন্তু এত কিছুর পরেও হাওড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোনও উন্নতি হয়নি বুধবার সন্ধ্যার ঘটনায় ফের তা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
ঠিক কী ঘটেছিল ওইদিন?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিল সালকিয়ার হনুমান বালিকা বিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী। ওই সময় বাঁধাঘাটের দিক থেকে দু’টি মোটরবাইকে করে আসা তিন যুবক তাঁদের উদ্দেশ্যে নানা অশ্লীল মন্তব্য করতে থাকে। পুলিশ জানায়, ওই তিন ছাত্রী যখন জেএন মুখার্জি রোডে সাঁইবাবা মন্দিরের কাছে পৌঁছায় ওই ইভটিজারদের মধ্যে একজন মোটরবাইক নিয়ে পড়ে যায়। ওই সময় এক ছাত্রী ‘ঠিক হয়েছে’ বলে চেঁচিয়ে উঠলে ওই মোটরবাইক আরোহী যুবক ওই ছাত্রীকে লক্ষ করে অশ্লীল গালিগালাজ শুরু করে। পুলিশ জানায়, ওই সময় ছাত্রীটি ছেলেটির সামনে গিয়ে সপাটে একটা চড় মারে। আর এরপরেই ওই যুবকেরা মোটরবাইক থেকে নেমে তিন ছাত্রীকে অশ্লীল গালিগালাজের পাশাপাশি শরীরিক হেনস্থা শুরু করে।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে বৃহস্পতিবার এক ছাত্রী বলে, ‘‘ওরা আমাদের বাঁধাঘাট থেকে বিরক্ত করতে শুরু করে। নানা খারাপ মন্তব্য করে। গালিগালাজ করায় আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। এরপরেই ওরা প্রকাশ্যে আমাদের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। ওড়নাও টেনে খুলে নেয়।’’
পুলিশ জানায়, এই ঘটনা দেখে প্রথমেই প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এসেছিলেন রাস্তার পাশে থাকা মোবাইল দোকানের মালিক গৌরীশঙ্কর চৌরাসিয়া। তিনি ওই যুবকদের পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখাতেই তারা মোটরবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পর রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে গৌরীশঙ্করবাবু যখন বাড়ি ফিরছিলেন তখন তাঁকে লক্ষ করে বোমা ছোঁড়ে কয়েকজন দুষ্কৃতী। তবে সেটি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় ওই ব্যবসায়ী প্রাণে বেঁচে যান। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে এ ভাবে তিনছাত্রীকে হেনস্থা হতে দেখে আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু রাতে বাড়ি ফেরার সময় আমি আক্রান্ত হব ভাবতে পারিনি।’’
ঘটনার পর রাতেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন গৌরীশঙ্করবাবু। পুলিশ রাতেই মিলন প্রসাদ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আক্রান্ত ছাত্রীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
কিন্তু প্রকাশ্যে রাস্তায় এমন ঘটনা কী পুলিশি নিষ্ক্রীয়তাকে প্রমাণ করে না?
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (উত্তর) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলনে, ‘‘এই ধরণের ঘটনা রোখার জন্য পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। তাই বুধবার রাতের ঘটনার অভিযোগ পেয়েই পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে। তবে তরুণীদের উত্যক্ত করার সঙ্গে বোমা মারার ঘটনার সম্পর্ক রয়েছে কি না তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy