পরিণতি: বস্তায় মোড়া দম্পতির দেহ। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
দৃশ্য এক: বিকেল সাড়ে পাঁচটা, বেলুড় স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করতে করতে মোবাইলে কথা বলছিলেন এক যুবক। হঠাৎ পিছন থেকে এক তরুণী এসে মোবাইল কেড়ে নিলেন। দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হল। প্রথমে দাঁড়িয়েই চলছিল কথা কাটাকাটি। একটু পরে প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে বসে পড়লেন তাঁরা। কিন্তু থামল না বচসা। বসেও তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল। তার মধ্যে স্টেশনে ঢুকল আপ বর্ধমান গ্যালপিং লোকাল ট্রেন। বেঞ্চে বসে থাকা ওই তরুণী আচমকা ট্রেনের দিকে ছুটতে শুরু করলেন। তাঁকে ছুটতে দেখে, তাঁর হাত ধরে ছুটতে শুরু করলেন ওই যুবকও। মুহূর্তের মধ্যে হাতে হাত ধরে চলন্ত ট্রেনের সামনে দু’জন একসঙ্গে ঝাঁপ দিলেন।
দৃশ্য দুই: চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিতেই দু’জনের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। সেই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে আর্তনাদ করে উঠলেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো আর এক যুবক। পরক্ষণেই তিনি জ্ঞান হারালেন।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যে এই ঘটনা দুটি দেখে হতচকিত হয়ে গেলেন স্টেশনে উপস্থিত সকলে।
কী হয়েছিল? রেল সূত্রে খবর, বুধবার বিকেলে বেলুড় স্টেশনে যে দু’জন চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। ওই দম্পতির নাম বিশ্বজিৎ সাহা (৪২) এবং সুষমা সাহা (৩৬)। তাঁরা শেওড়াফুলির জগদ্ধাত্রী পাড়ার বাসিন্দা। দিদি-জামাইবাবুকে চলন্ত ট্রেনের সামনে ওই ভাবে ঝাঁপ দিতে দেখে জ্ঞান হারান সুষমাদেবীর ভাই সমরজিৎ মণ্ডল।
আরও পড়ুন: বিপদে গার্ডের শরণ নিতে মহিলা কামরায় যন্ত্র
এ দিন সমরজিৎ জানান, তিনি এবং বিশ্বজিৎবাবু বেলুড়ের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। দিদির বাড়িতেই তিনি থাকতেন। তাঁর দিদি উত্তরপাড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী ছিলেন। বুধবার দুপুরে সুষমাদেবী তাঁকে ফোন করে বলেন, বিশ্বজিৎবাবুর সঙ্গে তাঁর কিছু সমস্যা চলছে। তিনি ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চান। তাই সমরজিৎবাবুর সাহায্য চান। দিদির কথা মতো তিনি স্টেশনে যান। কিন্তু স্টেশনে ঢুকেই তিনি দেখেন তাঁর দিদি এবং জামাইবাবু চলন্ত ট্রেনে ঝাঁপ দিয়েছেন। যদিও দিদি-জামাইবাবুর মধ্যে কী নিয়ে সমস্যা চলছিল সে বিষয়ে কিছু তিনি জানেন না বলেই দাবি করছেন সমরজিৎ।
ওই দম্পতির ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জানান, ওই দম্পতির দু’টি স্কুটি ছিল। দিন কয়েক আগে একটি স্কুটি চুরি হয়ে গিয়েছিল। সেটা নিয়ে তাঁদের মধ্যে অশান্তি চলছিল। তবে সেই অশান্তির জেরেই চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ কি না, তা অবশ্য বুঝতে পারছেন না পরিবারের সদস্যেরা। বিশ্বজিৎবাবুর দাদা মানস সাহা বলেন, ‘‘আমরা আলাদা বা়ড়িতে থাকি। ওদের দু’জনের মধ্যে মধ্যে কী এমন অশান্তি হল, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’
বিশ্বজিৎ সাহার বন্ধু সৌমিক রায় বলেন, ‘‘ওরা তো চলে গেল। কিন্তু ওদের তেরো বছরের ছেলেটাকে কী ভাবে সামলাব বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy