Advertisement
১৪ জুন ২০২৪

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আটা বিকোচ্ছে বাজারে

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আটা বিকোচ্ছে বাজারে। বিষয়টি নিয়ে রেশন ডিলাররা লিখিতভাবে খাদ্য দফতরে অভিযোগ জানালেও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। রেশন ডিলারদের দাবি, খাদ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন উপভোক্তারা বরাদ্দ আটা বিক্রি করে দিলে কিছু করার নেই।

মণিরুল ইসলাম
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৩
Share: Save:

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আটা বিকোচ্ছে বাজারে। বিষয়টি নিয়ে রেশন ডিলাররা লিখিতভাবে খাদ্য দফতরে অভিযোগ জানালেও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। রেশন ডিলারদের দাবি, খাদ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন উপভোক্তারা বরাদ্দ আটা বিক্রি করে দিলে কিছু করার নেই। যদিও সরকারিভাবে এই ধরণের ঘটনা জানা নেই বলেই দাবি করেছে জেলা খাদ্য দফতর।

খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পটি চালু হয়। এর আওতায় আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার ভিত্তিতে উপভোক্তাদের তিন ধরণের রেশন কার্ড দেওয়া হয়। কার্ডগুলি হল এসপিএইচএইচ, পিএইচএইচ, এএওয়াই (অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা)। এর মধ্যে এসপিএইচএইচ ও এএওয়াই এই দুই রেশন কার্ডের বিনিময়ে উপভোক্তা পিছু চাল, চিনি ছাড়াও তিন টাকা দরে সাড়ে সাতশো গ্রাম করে আটা দেওয়া হয়। কিন্তু গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ সেই আটা বিক্রি হচ্ছে বাজারে। তবে পুরোপুরি খোলাবাজার নয়, নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির কাছেই বাজার দরের থেকে অনেক কম দামে সেই আটা মিলছে।

কী ভাবে হচ্ছে হাতবদল?

স্থানীয় সূত্রে খবর, উপভোক্তাদের থেকে আটা কিনে নেওয়ার জন্য চক্র রয়েছে উলুবেড়িয়ায়। তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সেই আটা কিনে নিচ্ছে। এক প্যাকেট আটার বিনিময়ে উপভোক্তাদের ৫ টাকা থেকে ৬ টাকা দিচ্ছে। এরপর কয়েকটি হাত ঘুরে সেই আটা ৮-১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। বর্তমানে খোলা বাজারে এক কেজির আটার দাম কমবেশি ২৫-৩০ টাকা। তাই বাড়তি লাভের আশায় সাধারণ মানুষ ঘুরপথে এই আটা কিনছেন।

বাগনান এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির দাবি, তিনি স্থানীয় উপভোক্তাদের থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আটা কিনে পূর্ব মেদিনীপুরের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। উলুবেড়িয়া এলাকার এক উপভোক্তা জানালেন, তাঁদের পরিবারে মাসে ৪৮ প্যাকেট আটা আসে। তার মধ্যে ২০-২৫ প্যাকেট বাড়িতে ব্যবহার করা হয়। বাকি প্যাকেটগুলি স্থানীয় এক ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করা হয়। ওই উপভোক্তার দাবি, ‘‘এখন প্যাকেট প্রতি ৬ টাকা দাম পাচ্ছি। পরের মাস থেকে ৭ টাকা করে পাওয়ার কথা।’’

হাতবদল হওয়ার পরে ওই আটা কেউ রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন। কেউ বা সেই আটা খাওয়াচ্ছেন বাড়ির গবাদি পশুদের। রেশন ডিলারদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আলম বলেন, ‘‘সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টি খাদ্য দফতরের নজরে আনা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যে ওই আটা খারাপ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।’’ খাদ্য দফতরের এক কর্তার আশঙ্কা, গম ভাঙিয়ে আটা তৈরির মাসখানেক পর্যন্ত তার মান ঠিক থাকে। কিন্তু তারপর সেটি খারাপ হয়ে যেতে পারে। এই আটার হাতবদলে কিছুটা সময় লাগে। তাই যাঁরা ঘুরপথে ওই আটা কিনছেন তাঁদের সেটি খেয়ে অসুস্থ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

যদিও এই ধরনের চক্রের কথা জানেন না বলেই দাবি করেছেন জেলার খাদ্য দফতরের কর্তা অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে এটি হয়ে থাকলে ঠিক নয়। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Floor market Center
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE