Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
রোগ নির্ণয়ে সময় পার, নালিশ 

সোয়াইন ফ্লু-তে শিশুর মৃত্যু, আতঙ্ক চুঁচুড়ায়

গত মাসের শেষ দিক থেকেই সে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। দু’দফায় ভর্তি করানো হয়েছিল চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। রোগ সারেনি। ২১ জানুয়ারি তাকে ভর্তি করানো হয় পার্কসার্কাসের একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছে দশ মাসের শিশুটি। তিন দিন চেষ্টা চালালেও শেষরক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালেই মৃত্যু হল চুঁচুড়ার নিউ কলোনির বাসিন্দা, মধুস্মিতা ঘোষ নামে ওই শিশুটির।     

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:০৩
Share: Save:

গত মাসের শেষ দিক থেকেই সে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। দু’দফায় ভর্তি করানো হয়েছিল চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। রোগ সারেনি। ২১ জানুয়ারি তাকে ভর্তি করানো হয় পার্কসার্কাসের একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছে দশ মাসের শিশুটি। তিন দিন চেষ্টা চালালেও শেষরক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালেই মৃত্যু হল চুঁচুড়ার নিউ কলোনির বাসিন্দা, মধুস্মিতা ঘোষ নামে ওই শিশুটির।

পার্কসার্কাসের ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, মধুস্মিতাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছিল। সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার জেরে তার শ্বাসনালিতে সমস্যা হচ্ছিল। তার জেরেই সে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। কয়েক দিন জ্বরে আক্রান্ত হলেও প্রথমে সোয়াইন ফ্লু বোঝা যায়নি। চিকিৎসা দেরিতে শুরু হওয়ার জেরেই পরিস্থিতি জটিল হয়।

গত বছরও রাজ্যে সোয়াইন ফ্লু-তে মৃত্যু হয়েছিল। যদিও সরকারি ভাবে সে সংক্রান্ত কোনও তথ্য তুলে ধরা হয়নি। এ বছর মধুস্মিতার মৃত্যুই প্রথম সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তের মৃত্যু বলে চিকিৎসকদের একাংশের দাবি। যদিও স্বাস্থ্য দফতর জানায়, চিকিৎসার নথি খতিয়ে দেখে তবেই সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত কিনা তা ঘোষণা করা হবে।

মেয়েটির বাব সুশান্তবাবু জানান, ইমামবাড়া হাসপাতালে মধুস্মিতার প্রস্রাব, রক্ত, থাইরয়েডের পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে করানো হয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জেলার হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু নির্ণয়ের পরিকাঠামোই নেই। এ ব্যাপারে কিছু করা দরকার। আর কারও যাতে এমনটা না হয়।’’ শিশুটির ঠাকুমা জ্যোৎস্না ঘোষের খেদ, ‘‘রোগ নির্ণয় হতেই অনেক দিন চলে গেল।’’ ইমামবাড়া হাসপাতালের সুপার উজ্বলেন্দুবিকাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘উপসর্গ অনুযায়ী এখানে শিশুটির চিকিৎসা হয়েছিল। সুস্থ করেই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সোয়াইন ফ্লু হয়ে থাকলে কবে হল, সেটা প্রশ্ন।’’

ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসে মধুস্মিতা অসুস্থ হলে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসক দেখানো হয়। ৩১ ডিসেম্বর জ্বর এবং তরকার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় ওই রাতেই চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা হয়। ৫ জানুয়ারি শিশুটিকে ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর থেকেই শিশুটির পাতলা পায়খানা শুরু হয়। ৬ জানুয়ারি তাকে ফের ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৪ তারিখ সেখান থেকে ছাড়িয়ে চন্দননগরে এক চিকিৎসককে দেখানো হলে তিনিও নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করেন। কাশি থামেনি। ১৮ তারিখে শিশুটিকে পার্কসার্কাসের হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখানো হয়। সেখানেও বলা হয়, নিউমোনিয়া বলে মনে হচ্ছে।

১৯ তারিখে ফের প্রবল জ্বর আসে মেয়েটির। পরে জ্বর কমলেও সে নেতিয়ে পড়তে থাকে। ২১ তারিখ সকালে পার্কসার্কাসের ওই হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করানো হয়। ততদিনে মেয়েটি কাহিল হয়ে পড়ে। শ্বাসকষ্ট বাড়ে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ২২ জানুয়ারি পরিজনরা জানতে পারেন, মধুস্মিতার সোয়াইন ফ্লু হয়েছে।

চিকিৎসকেরা জানান, শুয়োর বা সারসজাতীয় পাখি এই রোগের ভাইরাস বহন করে। ওই ভাইরাস বাতাসে ভাসে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় শিশু এবং বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মধুস্মিতার মৃত্যুর খবরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মধুস্মিতাদের বাড়ির খানিক দূরে তোলাফটক মোড়ের কাছে ডাস্টবিনের ময়লা রাস্তায় উপচে পড়েছে। সেখানে খাবার খুঁজছে শুয়োরের দল। স্থানীয়দের অভিযোগ, যত্রতত্র শুয়োর ঘুরে বেড়ায়। নিয়মিত সাফাই হয় না।

হুগলি-চুঁচুড়ার পুরপ্রধা‌ন গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘পুরসভা ভাল ভাবেই সাফাইয়ের কাজ করছে। শুয়োর যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করতে আগে অভিযান‌ হয়েছে। ফের হবে। এলাকায় সচেতনতা ছড়াতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অরবিন্দ তন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য দফতরের তরফেও এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Swine flu Child dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE