Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

পুরসভা, পঞ্চায়েত সমিতির পর এ বার ‘দখল’ পুজো কমিটিও এ বার ‘দখল’ তৃণমূলের

ভয়, প্রলোভন দেখিয়ে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি দখল দেওয়ার নেওয়ার অভিযোগ ছিলই। এবার এই তালিকায় যুক্ত হল পুজো কমিটি দখল নেওয়ার। এমন নজির দেখা গেল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে।

সোনাতলা শিবতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপ। ছবি: সুব্রত জানা।

সোনাতলা শিবতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপ। ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
হাওড়া শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৮
Share: Save:

ভয়, প্রলোভন দেখিয়ে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি দখল দেওয়ার নেওয়ার অভিযোগ ছিলই। এবার এই তালিকায় যুক্ত হল পুজো কমিটি দখল নেওয়ার। এমন নজির দেখা গেল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে।

গত বছর পর্যন্ত যে পুজোর নাম ছিল ‘সোনাতলা মিলন সঙ্ঘ সর্বজনীন দুর্গাপুজো’। এ বছর একই পুজো হচ্ছে ‘সোনাতলা শিবতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির’ নামে। আগের পুজোটি কংগ্রেস করত। নতুন নামের পুজো কমিটির সিংহভাগ সদস্য তৃণমূলের।

তবে কমিটির নামে বদল হলেও পুজোর বয়স কিন্তু বেড়েছে পুরনো কমিটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। সোনাতলা মিলন সঙ্ঘের পুজোর বয়স গত বছর পর্যন্ত ছিল ৮২ বছর। আর সোনাতলা শিবতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসবের বয়স দেখানো হয়েছে ৮৩ বছর। মিলন সঙ্ঘের পুজোর যিনি উদ্যোক্তা ছিলেন সেই সরোজরঞ্জন কাঁড়ার বললেন, ‘‘আমার হাত থেকে পুজোর স্বত্ব তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু অতীতকে বাদ দিতে পারছে না তারা।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনাতলা মিলন সঙ্ঘের পুজোর বেশ সুনাম ছিল। বিশেষ করে এই পুজোর আলোকসজ্জা ছিল দেখার মতো। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার সরোজবাবু এই পুজোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে। ৩২ বছর আগে এই পুজো তাঁর বাবা শুরু করেন বলে সরোজবাবু জানান। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তিনি এলাকায় আর থাকেন না। টিম টিম করে চলছে তাঁর পরিচালনাধীন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সরোজবাবু গত বিধানসভা নির্বাচনে উদয়নারায়ণপুরে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। তৃণমূল প্রার্থী সমীর পাঁজার কাছে তিনি পরাজিত হন। সরোজবাবুর অভিযোগ, তাঁর পরাজয়ের পর থেকেই বিরোধীদের উপরে অত্যাচার শুরু করে তৃণমূল। তাঁকে এলাকাছাড়া করা হয়। কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয় তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারপরেই দখল করে নেওয়া হয় পুজোর দুর্গাপুজোর স্বত্ব। যদিও তাঁর উপরে অত্যাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

নতুন কমিটির হাত ধরে যে পুজো হচ্ছে তার বয়স যেমন পরিবর্তন হয়নি, তেমনি পরিবর্তন হয়নি তার স্থানও। যেখানে মিলন সঙ্ঘের পুজো হতো সেখানেই হচ্ছে সোনাতলা শিবতলা সর্বজনীন দুর্গাপুজো। এমনকী সরোজবাবুর হাতে থাকা দুর্গাপুজোর জাঁকের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সোনাতলা শিবতলা সর্বজনীন পুজো। উদ্যোক্তারা জানালেন, আইফেল টাওয়ার, মিশরের মরুভূমি এইসব তুলে ধরা হবে আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে। বাজেটও ৩ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে উদ্যোক্তাদের দাবি।

সরোজবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমাদের পুজোর সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের মিথ্যা মামলার ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়েছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘পুজোর দখল নিয়েছে ঠিক আছে। তা বলে কমিটির নামও তারা বদলে দিল!’’ সোনাতলা শিবতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি স্বপন গোস্বামী এবং তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা সম্পাদক শান্তনু বেজ অবশ্য দাবি করেন, এই পুজোর স্বত্ব দখলের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।

স্বপনবাবু বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে এই পুজো একজনেরই হাতে ছিল। তাই এলাকাবাসীরা সভা করে সিদ্ধান্ত নিই, পুজোর উদ্যোগকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সকলকে নিয়েই এই পুজো করার সিদ্ধান্ত নিই। নামও বদলে যায় কমিটির।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পুজো তো একই। শুধু কমিটির নাম বদল হয়েছে। কিন্তু তার প্রাচীনত্ব নিয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Complaint TMC Puja committee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE