তিনি শ্যামপুর-২ ব্লকের নাকোল পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিক (জব কার্ডধারী) নন, কর্মী। মৌমিতা মণ্ডল নামে ওই কর্মীর পদের নাম ‘ভিলেজ লেভেল এন্ত্রেপ্রেনর’ (ভিএলই)। কাজ— ওই প্রকল্পের প্রতিদিনের কাজ নির্দিষ্ট অ্যাপ-এর মাধ্যমে কম্পিউটারে ‘আপলোড’ করা। কিন্তু তাঁকেই প্রকল্পের ‘দক্ষ শ্রমিক’ দেখানো হয়েছে পঞ্চায়েতের খাতায়। তিনটি অর্থবর্ষের মজুরি বাবদ প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে!
বিহারের মুজফফরপুরের রতনৌলি গ্রামের সঞ্জয় সহনী ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম মুখ। প্রশাসনকে বাধ্য করেছিলেন নড়ে বসতে। হাওড়ার ওই পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগ অবশ্য তুলেছেন বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী। প্রকল্পের কাজ নিয়ে সরকারি ওয়েবসাইট ঘাঁটতে গিয়েই বিষয়টি সামনে আসে বলে তাঁদের দাবি। প্রথমে পঞ্চায়েত এবং পরে বিডিও-র কাছে ঘটনার তদন্ত চেয়ে সম্প্রতি স্মারকলিপি দেন তাঁরা। সরব হয়েছে বিরোধীরাও। দুর্নীতি ধরানোয় মুজফফরপুরের সঞ্জয়ের নামে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে হুমকি-মেল পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। দুর্নীতির প্রতিবাদ জানানোয় নাকোলের কিছু গ্রামবাসীকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
তাঁর অ্যাকাউন্টে যে ওই টাকা জমা পড়েছিল, তা মেনে নিয়েছেন নাকোলের ভিএলই মৌমিতা। তিনি বলেন, ‘‘জব কার্ডধারীদের টাকা আমার অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল। সেই টাকা জব কার্ডধারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এটা করা হয়েছে।’’ কিন্তু ওই প্রকল্পের জেলা সেল থেকে জানানো হয়েছে, জব কার্ডধারীদের টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে কোনও ভাবেই যেতে পারে না। শ্রমিকদের নিজের অ্যাকাউন্টে যায়।
যে সময় থেকে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই সময় পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন তৃণমূলের সদানন্দ দাস। বর্তমানে তিনি ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। কোনও আলোচনার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। ওই ভিএলই-র ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্টও পরীক্ষা করা হবে। তারপরে বিডিও-কে রিপোর্ট দেব।’’ অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিডিও সুব্রত ঘোষ।
প্রতিটি পঞ্চায়েতে একজন করে ‘ভিএলই’ আছেন। কাজের জন্য তিনি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে বেতন পান। তা সত্ত্বেও নাকোলের ‘ভিএলই’ কী ভাবে ওই প্রকল্পের ‘দক্ষ শ্রমিক’ হলেন এবং কী ভাবে প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে গেল, তা নিয়ে প্রথমে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। এক সিভিক ভলান্টিয়ারকেও ওই প্রকল্পের শ্রমিক দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এ সব কথা সামনে আসার পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল হয়। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ মনে করছেন, এর পিছনে কোনও দুষ্ট বা স্বার্থান্বেষী চক্র কাজ করেছে। ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। কংগ্রেস নেতা আতিয়ার খান বলেন, ‘‘অভিযোগ জমা দেওয়ায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় ভাবে সুবিচার না-পেলে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের দ্বারস্থ হব। এ ভাবে টাকা টাকা লুট মানব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy