খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দৃদ্ধাশ্রমে থাকা দম্পতিকে টাকা ফেরত দিলেন বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ।
কলকাতার শিয়ালদহের বাসিন্দা সোমদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী যুথিকাদেবীর এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। পরে যুথিকাদেবীর ক্যানসার ধরা পড়ে। কিছুদিনের মধ্যে সোমদেবাবুও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তার পরে কোনও কারণে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, শেষ জীবনটা বৃদ্ধাশ্রমে কাটাবেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাঁরা চন্দননগরের বোড়াইচণ্ডীতলা এলাকার একটি বৃদ্ধাশ্রমে আসেন। ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে ওই বন্দ্যোপাধ্যায় দম্পতি সেখানে ২ লক্ষ টাকা অগ্রিম জমা দিয়ে এবং মাসে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে দু’টি ঘর নেন। কয়েক বছর কাটতে না কাটতেই সেখানে থাকা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। হঠাৎই হোম কর্তৃপক্ষ ওই দম্পতির কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। তখন তাঁরা আরও ৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের হাতে দেন। অভিযোগ, কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় পরবর্তীকালে আরও কিছু টাকা তুলে মোট ৮ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দেন ওই দম্পতি। ওই বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ আরও ভাড়া বাবদ আরও টাকা চান বলে অভিযোগ। দম্পতি তাঁদের অসহায় অবস্থার কথা জানালে বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ তাঁদের হোম ছাড়ার নির্দেশ দেন। অভিযোগ, নিজেরা না উঠলে হোম থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হবে। এরপর ওই দম্পতি কোনও উপায় না পেয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা সেই মতো বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের জমা দেওয়া টাকা ফেরত চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দেবেন বলে জানিয়ে দেন।
কোনও উপায় না পেয়ে দম্পতি চন্দননগরের আইনী সহায়তা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হন। তাঁদের পরামর্শ মতো জেলা প্রশাসনের কাছে যান। গত ১৯ অগস্ট খবরটি প্রকাশিত হয়। এর পরেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডেকে পাঠানো হয় হোম কর্তৃপক্ষকে। তা ছাড়া, কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয় আগামী মাসের মধ্যে তাঁদের টাকা ফেরত দেওবার জন্য। সেই মতো বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ গত ৩১ অগস্ট ওই দম্পতিকে তাঁদের জমা দেওয়া মোট ৮ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার তিনটি চেক তুলে দেন। সোমদেববাবু বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম শেষ জীবনটা এখানে কাটিয়ে দেব। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের এই আচরণে খুব কষ্ট লাগল।’’ আইনিসহায়তা কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে এই বৃদ্ধাশ্রমে এক বৃদ্ধ আবাসিকের উপর কর্তৃপক্ষ অত্যাচার চালিয়েছিল। তারপর আবার এক দম্পতির সঙ্গে এই আচরণ করল। প্রশাসনের উচিত এই বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রমগুলির উপর নজরদারি চালানো।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে বৃদ্ধাশ্রমের মালিক কাশীনাথ রায় বলেন, ‘‘তাঁরা যে টাকা জমা দিয়েছিলেন, তা হঠাৎ করে চাওয়ায় বিপদে পড়েছিলাম। তবে নির্দিষ্ট সময়ে সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy