কোনও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কর্মী (শিক্ষিকা) আছে তো সহায়িকা (রাঁধুনি) নেই। আবার কোনও কেন্দ্রে সহায়িকা আছে তো কর্মী নেই।
প্রায় এক বছর ধরে এ ভাবেই চলছে আমতা-১ ব্লকের ৬২টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। ফলে, শিশুদের পঠনপাঠন ব্যাহত তো হচ্ছেই, তাদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন প্রসূতিরাও।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্লকে ২৯৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ২৮৭টি চলছে। বাকিগুলি তৈরিই হয়নি। ২৮৭টির মধ্যে ৫১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকা বা রাঁধুনি নেই। আর ১১টি কেন্দ্রে স্থায়ী কর্মী বা শিক্ষিকা নেই। কারণ, দীর্ঘ এক বছর ধরে ওই সব কেন্দ্রে কোনও নিয়োগ হয়নি।
ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প অধিকর্তা তথাগত নাগ সমস্যার কথা মেনে নিয়ে জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাঁরা শীঘ্রই নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা প্রকল্প অধিকর্তা লিলি চট্টোপাধ্যায় এবং জেলা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়োগ কমিটির সহ-সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘শীঘ্রই নিয়োগ হবে।’’ কিন্তু এক বছর ধরে কেন নিয়োগ হল না, তার উত্তরে পুলকবাবুর দাবি, ‘‘২০০৯ সালের প্যানেলের কর্মী, সহায়িকা নিয়োগ সবে হয়েছে। বাকি নিয়োগও দ্রুত হবে।’’
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে ৬ বছর পর্যন্ত শিশুদের পড়ানোর পাশাপাশি কখনও ডিম-ভাত, কখনও খিচুড়ি, কখনও বা সব্জি-ভাত রান্না করে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া, প্রসূতিদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু সহায়িকা না-থাকায় ওই সব কেন্দ্রে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা জানিয়েছেন। তবে, সম্প্রতি সরকারি নির্দেশে ওই সব কেন্দ্রে ফল, ছোলা, মুড়ি সরবরাহ করা হয় শিশু, মা ও গর্ভবতীদের জন্য।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির কর্মীদের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই শিশুরা ছোলা বা মুড়ি খেতে চায় না। ফলে, তারা তা নেয় না। এই অবস্থায় তাদের রান্না করা খাদ্য সরবরাহ করাই একমাত্র উপায়। কিন্তু সেটা সম্ভব না হওয়ায় শিশু, গর্ভবতী মায়েরা ঠিক মতো পুষ্টিকর খাদ্য পাচ্ছে না। যে সব কেন্দ্রে স্থায়ী কর্মী নেই, সেখানে অন্য কেন্দ্র থেকে কর্মী পাঠানো হয়। সেখানে তিন দিন করে পড়াশোনা হয়। ফলে, ওই সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। পুষ্টিকর খাবার না পেয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে শিশুর সংখ্যাও কমছে।
কর্মী রয়েছে কিন্তু সহায়িকা নেই, এমন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে ধাড়াপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। দিন কয়েক আগে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, জনা ১২ শিশু এসেছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেল, ওই কেন্দ্রে পড়ুয়ার সংখ্যা অন্তত ৬০। আগে গড়ে ৩০-৩৫ জন শিশু আসত। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০-১২ জনে। কারণ, এখানে রান্না করা খাবার দেওয়া হয় না। স্থানীয় মহিলারা জানান, প্রায় ৮০-৯০ জন গর্ভবতী, প্রসূতি আসতেন। এখন গড়ে ২০ জনও আসেন না। একই অবস্থা অন্যান্য ৫১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেরও।
রাইদাস পাড়ার এক মহিলা বলেন, ‘‘বউমার জন্য ওই কেন্দ্র থেকে খাবার আনতাম। কিন্তু এখন রান্না হয় না। তাই যাই না। ওখানে রান্না শুরু হলে খুবই ভাল হয়।’’ একই কথা শোনা গিয়েছে আরও কয়েক জনের মুখেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy