প্রতিবাদ: এই জমিতে বহুতল গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে অভিযোগ।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত বাগানবাড়ির সামনে বহুতল গড়ার পরিকল্পনা নিলেন সংশ্লিষ্ট জমির মালিক।স্থানীয় বাসিন্দারা তার প্রতিবাদ করে পুরসভায় ওই জমি রক্ষার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন।
কোন্নগরে অবস্থিত এই বাগানবাড়িটি রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তালিকাভুক্ত। সেই বাড়ির সামনেই একটি কারখানার জমিতে ২০তলা আবাসন তৈরির প্রকল্প পুরসভায় জমা দিলেন সেই জমির মালিক। এতে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা পুরসভায় ওই জমি রক্ষার জন্য লিখিত আবেদন জানান। চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমিও বিষয়টির প্রতিবাদে রাজ্য পুর ও নগর উন্নয়ন দফতরকে চিঠি দিয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুয়ায়ী হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের সামনে এমন কোনও নির্মাণ করা যায় না, যাতে তার দৃশ্যমানতা নষ্ট হয়।
কোন্নগরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িটি জিটি রোড লাগায়ো। ওই বাগানবাড়ির সামনের দিকটি একেবারে গঙ্গার কোল ঘেঁষে অবস্থিত। অবন ঠাকুরের লেখা ‘জোড়াসাঁকোর ধারেতে’ বইটিতে এই বাড়িটির উল্লেখ রয়েছে। তাঁর ছোটবেলার অনেকটা সময় এখানে কেটেছে। স্বভাবতই বাড়িটির সঙ্গে কোন্নগরের স্থানীয় মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।
অতীতে ওই বাগান বাড়ির সামনেই একটি কারখানা ছিল। কারখানার জমি সমেত বাগানবাড়িটিতে মোট ১২ বিঘে জমি রয়েছে। ২০০৭ সালে কলকাতার এক নামী আবাসন নির্মাতা সংস্থা
সেই জমি সমেত বাগান বাড়িটি কিনে নেন। তখনই স্থানীয় মানুষজন প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে ওই বাগান বাড়িটি হস্থান্তর হল?
এরপরই পুরসভার টনক নড়ে। পুরসভা ওই জমির বর্তমান মালিকের কাছে অবন ঠাকুরের বাগান বাড়িটি রক্ষার লক্ষ্যে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। মাস কয়েক আগে পুরসভা কর্তৃপক্ষ ওই বাগানবাড়িটির মালিকানা পান। বর্তমানে সেই বাগান বাড়িটিকে নতুন কলেবরে গড়ে তুলছে পুরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই উদ্যোগের মাঝেই সম্প্রতি ওই জমির বাকি অংশের মালিক সতীশ লাখোটিয়া কোন্নগর পুরসভায় একটি প্রাথমিক প্রকল্প জমা দেন। পুরসভা সূত্রের খবর, সেই প্রকল্প অনুয়ায়ী বাগানবাড়িটির সামনেই একটি আবাসন তৈরি হবে। এই উচ্চতার আবাসন রাজ্যের খুব কম জেলাতেই আছে।
বিষয়টি জানার পরই স্থানীয় মানুষজন নড়েচড়ে বসেন। কোন্নগরের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় সরকারের অবসর প্রাপ্ত অফিসার মিহির কুমার ভট্টাচার্য-সহ স্থানীয় মানুষজন ওই জমিটি রক্ষার জন্য পুরসভার কাছে আবেদন করেন। মিহিরবাবু বলেন, ‘‘অবন ঠাকুরের বাগান বাড়ির সামনে ২০ তলা আবাসন তৈরি হলে বাগানবাড়িটি তো ঢাকা পড়ে যাবে! বিষয়টি আইনবিরুদ্ধ। আমরা প্রয়োজনে নাগরিকদের নিয়ে কমিটি গড়ে ওই জমি কিনে নেব মালিকের কাছ থেকে। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে আমরা জনমত গঠন করব।’’
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইন অনুয়ায়ী কোনও হেরিটেজ সাইটের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এমন কোনও নির্মাণ করা যায় না। তার উপর সামনেই জিটি রোড। সেটিও হেরিটেজ। বহুতল হলে মাটির নীচে ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ এই বিষয়ে কোন্নগর পুরসভার পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জমির মালিকের থেকে প্রাথমিক সাইট প্ল্যান পেয়েছি। বিষয়টি বিবেচনার জন্য দমকল এবং পুর ও নগর উন্নয়ন দফতরে পাঠিয়েছি। এখন রাজ্য সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।’’
এই বিষয়ে ওই জমির মালিক সতীশচন্দ্র লাখোটিয়া অবশ্য বলেন, ‘‘আমি মোট ১২ বিঘে জমি কিনেছিলাম। তিন বিঘে জমিতে নির্মাণের জন্য একটা সাইট প্ল্যান জমা দিয়েছি। ওই জমিতে কোনও কারখানা ছিল না।’’ যদিও পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্যবাবু বলেন, ‘‘ আমরা নিশ্চিত ওই জমিতে কারখানা ছিল। জমির মালিকের হয়তো তা জানা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy