নিদ্রাভঙ্গ: হাসপাতাল চত্বরে জমে থাকা জলে এ ভাবেই জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
জ্বরের রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে হাসপাতালে। পরিস্থিতি এমন যে, সিঁড়ির চাতালেও ঠাঁই মিলছে রোগীর। এ বার সেই হাওড়া জেলা হাসপাতাল চত্বর থেকেই মিলল অসংখ্য মশার লার্ভা। হাসপাতাল চত্বরে যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ে থাকা চায়ের কাপ, খাবারের প্যাকেট, টায়ার এবং প্লাস্টিকের ভিতর জমে থাকা জলেই জন্মাচ্ছে এই লার্ভা। হাওড়া পুরসভার মতে, এর মধ্যে অধিকাংশ লার্ভাই পিউপায় পরিণত হয়েছে। তা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে সময়ের অপেক্ষা।
হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার হাওড়া জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গি দমন অভিযান চালানোর পরে উঠে এসেছে এমনই ছবি। সব দেখেশুনে বিস্মিত জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। যদিও লোকবলের অভাব বলেই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে ৬০০ শয্যার এই হাসপাতালে রোগীর ভিড় সামলাতে চিকিৎসকেরা হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে হাসপাতাল চত্বরের এমন দশা হয় কী ভাবে?
যদিও পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ হাসপাতাল সুপারকে সর্তক থাকতে লিখিত ভাবে অনুরোধও জানানো হবে।
নিধন করতে এল ধোঁয়া-কামান। মঙ্গলবার, হাওড়া জেলা হাসপাতালে।
হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হাসপাতালের ভিতর এ ভাবে টায়ার, খাবারে প্যাকেট, থার্মোকলের বাটি পড়ে থাকে কী করে? এ ব্যাপারে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ওই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন অসংখ্য মানুষ।’’ এ দিন দুপুরে ভাস্করবাবুর নেতৃত্বেই পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল প্রথমে হাওড়া জেলে এবং পরে হাওড়া জেলা হাসপাতালে অভিযান চালায়।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়, গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলের ভিতর অনেকটাই পরিচ্ছন্ন। বর্তমানে ৫৭৯ জন কয়েদি থাকলেও এখনও পর্যন্ত কারও জ্বর হওয়ার খবর নেই।
স্বাস্থ্য দফতরের দলটি এর পরে যায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যাকে ডেকে নিয়ে সেখানে লার্ভা চিহ্নিত করে ধ্বংস করার কাজ শুরু করেন ভেক্টর কন্ট্রোলের কর্মীরা। তাঁরা দেখেন, হাসপাতালের ভিতরে জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা (২) কুণাল দে-র অফিসের সামনের দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে রাখা রয়েছে টায়ার। তার ভিতরে জমে থাকা জলেও মিলেছে লার্ভা। লার্ভা মিলেছে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনের বাগানে পড়ে থাকা চায়ের কাপ-সহ বিভিন্ন প্লাস্টিকের জিনিসের ভিতরে জমা জলে।
হাসপাতালে পরিত্যক্ত জিনিস থাকে কী ভাবে? ডেঙ্গির মশা নিয়ে সর্তক করা যাঁদের কাজ, তাঁরা নিজেরা কেন সর্তক হননি? এ প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি হাসপাতাল সুপারের কাছ থেকে। হাসপাতালের নিজস্ব সাফাইকর্মীরা কেন চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখেন না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এর কোনও উত্তর দেননি সুপার। এমনকী দায়সারা উত্তর দিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা কুণালবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এই হাসপাতালটি হাওড়া পুরসভা এলাকার মধ্যে পড়ে। তাই পুরসভাই এই কাজটি করে থাকে। পরিকাঠামো এবং লোকবলের অভাব থাকায় হাসপাতালের পক্ষে সে কাজ করা হয়ে ওঠে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy