সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। শ্রীরামপুরে একটি বিয়েবাড়িতে তারস্বরে বেজে চলেছে সানাই। ঘড়িতে রাত সা়ড়ে ১০টা। সামনেই ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষা। অনেক রাত পর্যন্ত প়ড়াশোনা করে। কিন্তু সানাইয়ের এমন আওয়াজে পড়াই দায়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাছেই বিয়েবাড়িতে গিয়ে তাঁদের সানাইয়ের আওয়াজ কম করতে বলেছিলেন ওই পরীক্ষার্থীর বাবা।
বলাবাহুল্য তাঁর কথায় কেউ কর্ণপাত করেননি। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে একটি দৈনিক সংবাদ পত্রে ফোন করে জানান বিষয়টি। সংবাদপত্র অফিস থেকে ফোন যায় সংশ্লিষ্ট থানায়। থানার উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয় সানাই।
এটা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। প্রতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে মাইক বাজানোয় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিদের্শিকা জারি করা হয়। কিন্তু সেই নির্দেশিকা মেনে চলতে কি সাধারণ মানুষ, কি রাজনৈতিক দল সকলেরই সদিচ্ছার অভাব বারবার দেখা গিয়েছে। নিয়মমতো ওই সব পরীক্ষার দিনগুলিতে মাইক বাজানোয় নিয়ন্ত্রণ থাকলেও তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সভা, মিছিল করতে দেখা যায়। এই অবস্থায় সরকারি নির্দেশিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। শুধু এই দুই পরীক্ষাই নয়, এই সময়েই চলে সিবিএসই, আইসিএসই বোর্ডের পরীক্ষা। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় ওই পরীক্ষার্থীদেরও।
অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকার নির্দেশিকা জারি করলেও তা ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট থানার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বার বারই এ বিষয়ে তাঁদের গা ছাড়া মনোভাব দেখা গিয়েছে। উল্টে থানা থেকে বলা হয়, অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু যেখানে পরীক্ষা চলাকালীন তারস্বরে মাইক বাজছে শোনা যায়, সেখানে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকেরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মাধ্যমিক পরীক্ষার তিন দিন আগে থেকে মাইক বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তার আগে সারা বছর যা নিয়ম, সে ভাবেই চলে। অভিভাবকদের দাবি, ‘‘পরীক্ষার দিনগুলিতে মাইক বাজানোয় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার প্রস্তুতি তার অনেক আগেই শুরু হয়ে যায়। তাই পরীক্ষার অন্তত এক মাস আগে থেকে মাইক বাজানো নিয়ে নির্দেশিকা জারি হলে সব পরীক্ষার্থীরই উপকার হয়।’’
চুঁচুড়ার মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার বলেন, ‘‘তারস্বরে মাইক বা ডিজে বক্স বাজানো, শব্দবাজি ফাটানো নিয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেউ অভিযোগ করলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
পরীক্ষার সময় মাইক বাজানোর বিষয়টি অস্বীকার করেননি জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব। তাঁর আশ্বাস, ‘‘পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে আমাদের দলীয় কর্মসূচিতে যাতে শব্দবিধি মেনে মাইক বাজানো হয়, কর্মীদের তা বলব। পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা হোক, আমরা চাই না।’’ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা শিক্ষাকর্মী চন্দন দেবনাথ বলেন, ‘‘মাইক বাজানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিয়েবাড়িতে বাজি ফাটানোও এখন ফ্যাশন। পরীক্ষার্থীদের কথা কেউ ভাবেন না। আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও দরবার করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy