বিভিন্ন দাবিতে কুষ্ঠরোগীরা সিমলাগড়ে জিটি রোড অবরোধ করেছেন। —নিজস্ব চিত্র
তাঁদের জন্য সরকারি প্রকল্পে নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। মাসে ১২ কেজি চাল, শীতে কম্বল ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবে তা মেলে না বলে অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত ওই সব সুবিধার দাবিতে বুধবার পান্ডুয়ার সিমলাগড়ে জিটি রোড অবরোধ করলেন কুষ্ঠরোগীরা। নড়ে বসল প্রশাসন।
কুষ্ঠরোগীদের খেদ, ভোটের সময় হাতের কাছে সরকারি প্রকল্প পৌঁছে দিতে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি পালন করছে প্রশাসন। কিন্তু তাঁদের দুয়ারে প্রশাসনের পা পড়ে না। উল্টে তাঁরা প্রশাসনের দরজায় ঘুরেও পরিষেবা পাচ্ছেন না। সেই ‘বঞ্চনা’র প্রতিবাদেই এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ অবরোধ শুরু হয় ‘কুষ্ঠরোগী সংগ্রাম সমিতি’র ডাকে। ওই রোগে আক্রান্ত শ’দুয়েক মানুষ তাতে শামিল হন। অবরোধের জেরে যানজট হয়। অটো, টোটো, বাস এমনকি ভিন্ রাজ্যের পণ্যবাহী ট্রাকও দাঁড়িয়ে যায়।
পান্ডুয়া ব্লকের ৩৯৯ জন কুষ্ঠরোগী ওই সংগঠনের সদস্য। তাঁরা জানান, সরকারি প্রকল্পে তাঁদের মাসে ১২ কেজি চাল, শীতে একটি কম্বল, সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বছরের শ্রেষ্ঠ উৎসবে পোশাক পাওয়ার কথা। কিন্তু তা তাঁরা পাচ্ছেন না। সংগঠনের সম্পাদক প্রকাশ ঝা বলেন, ‘‘এ বার পুজোয় পোশাক দেওয়া হয়নি। চাল পর্যন্ত নিয়মিত ভাবে দেওয়া হচ্ছে না। আমপানে অনেক কুষ্ঠরোগীর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু, ক্ষতিপূরণ মেলেনি। কেন এই বঞ্চনা?’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘সরকার তো ঢাকঢোল পিটিয়ে মানুষের দুয়ারে যাওয়ার কথা বলছে। আমরা প্রান্তিক মানুষ বলে যখন-তখন যে টুকু খুশি দিলেই হল? প্রকল্পের ঘোষণা অর্থহীন?’’
অবরোধকারীদের মধ্যে সিমলাগড়ের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব যামিনী দেশমুখ বলেন, ‘‘চেয়েচিন্তে কোনওরকম সংসার চালাচ্ছি। হাসপাতাল থেকে ওষুধও ঠিকমতো পাই না। ওষুধ, চাল নিয়মিত না দিলে চলে?’’ একই বক্তব্য মিলন মোদক, শঙ্কর বাউলদাস, রুস্তম আলিদের মতো অবরোধকারীদেরও। ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা না হওয়ায় শারীরিক কষ্টের মধ্যেও তাঁরা পথে নেমেছেন বলে অবরোধকারীদের অনেকে জানান। কারও কারও দাবি, ওই রোগের জন্য ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বাঁধতে হয়। তার জন্য হাসপাতাল থেকে গজ, তুলো, ব্যান্ডেজ দেওয়া হত। বাড়িতেই তাঁরা ব্যান্ডেজ বাঁধতে পারতেন। বর্তমানে ওই সব চিকিৎসা-সরঞ্জামও দেওয়া হয় না। তাই, হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু, সব সময় হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয় না।
অবরোধের খবর পেয়ে পান্ডুয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে দেন, প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে প্রশাসনের লিখিত প্রতিশ্রুতি না পেলে অবরোধ তোলা হবে না। ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, এ দিনই ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কুষ্ঠরোগীদের প্রাপ্য চাল পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পঞ্চায়েতের দেওয়া স্লিপ রেশন দোকানে দেখালে চাল মিলবে। ওই লিখিত নির্দেশ পাওয়ার পরে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। অন্যান্য দাবিদাওয়া নিয়েও প্রশাসনের তরফে আশ্বাস মেলে অবরোধকারীদের।
ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘জেলা থেকে নির্ধারিত ব্যক্তিদের নামে চাল পাওয়ার সার্কুলার আসতে দেরি হয়েছে। তবে, বুধবার থেকেই পঞ্চায়েতের মাধ্যমে চাল বিলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওঁদের অন্যান্য দাবিও দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy