তালাবন্ধ: হাসপাতালের পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র বন্ধ। ছবি: মোহন দাস
দিনের বেলাতেই হাসপাতাল চত্বরে নাকে আসে গাঁজার কটূ গন্ধ।
সন্ধের পর ইতিউতি বসে যায় মদ-জুয়ার আসর।
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে একবার ঘুরলেই এ সব টের পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ওই চত্বরে হইহল্লা, মারামারি, লুঠপাট, চুরি, ছিনতাই, শ্লীলতাহানি লেগেই রয়েছে, এমনই অভিযোগ বারবার তুলছেন রোগীর আত্মীয়েরা। কিন্তু অবস্থা পাল্টাচ্ছে না। হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পটি অনেকদিনই বন্ধ। সিসি ক্যামেরা বসিয়েও লাভ হয়নি।
সমস্যার কথা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। আতঙ্কিত তাঁরাও। একই সঙ্গে তাঁদের কথাবার্তায় ফুটে উঠছে অসহায়তাও। হাসপাতালের সুপার শিশিরকুমার নস্কর বলেন, “গত মার্চে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে মহকুমাশাসক এবং এসডিপিও-র উপস্থিতিতে ওই অসামাজিক কাজকর্মের প্রসঙ্গ তুলে নিরাপত্তার দাবি করেছি। কয়েকদিন সিভিক ভলান্টিয়ারদের দেখা গেলেও আর দেখা যাচ্ছে না। আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।” পুলিশেব সাহায্য না পেলে শুধু কিছু সিসি ক্যামেরার সাহায্যে প্রায় ৬০ বিঘার হাসপাতাল চত্বরের অবাঞ্ছিত ঘটনা ঠেকানো সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছে দিয়েছেন সুপার।
এসডিপিও (আরামবাগ) হরেকৃষ্ণ পাই জানান, পুলিশকর্মী কম থাকায় হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পটি চালু রাখা যায়নি। সিভিক ভলান্টিয়ার রেখে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশ এবং সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য রুখতে সুপারের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১১ সালের গোড়ায় স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসে। ক্যাম্পে পালা করে একজন এএসআই এবং একজন কনস্টেবল থাকতেন। কিন্তু ২০১৪ সালের গোড়ায় এক রাতে সেই ক্যাম্পের পুলিশের বিরুদ্ধেই সাফাইকর্মীদের আবাসনে গিয়ে অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠে। কয়েক মাস পরেই ক্যাম্পটি তুলে নেওয়া হয়। ‘পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র’ লেখা সেই ঘরটি এখন তালা মারা।
হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বর যেন অসামাজিক কাজকর্মের সবচেয়ে নিরাপদ ঠিকানা হয়ে উঠেছে! সাইকেল, মোটরবাইক চুরি, রাতে রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা বা জিনিসপত্র ছিনতাই এবং শ্লীলতাহানির ঘটনাও কম নয়। যৌনকর্মীদের আনাগোনাও বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খানাকুলের ঠাকুরানি চকের এক রোগীর আত্মীয়ের অভিযোগ, “হাসপাতালে অপরাধ দমনে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে অভিযোগ করতে গেলে হেনস্থা করা হয়।’’ আরামবাগ থানার পুলিশের দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৌখিক অভিযোগ মেলে। তার ভিত্তিতেই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। আরামবাগ বিধায়ক তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল চত্বরে অসামাজিক কাজকর্ম রুখতে পুলিশকে ইতিমধ্যেই কড়া পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এখন দেখার, হাসপাতাল চত্বরে অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ হয় কিনা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy