অবহেলা: এমনই অবস্থা হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর। নিজস্ব চিত্র
গঙ্গাপারের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুল। তা সত্ত্বেও গোটা সেতু জুড়ে অযত্ন আর অবহেলার দগদগে ক্ষত। সেই ক্ষতে প্রলেপ দেবে কে, তা নিয়েই সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর।
হাওড়ার সেই বঙ্কিম সেতুর কোথাও রেলিং ভেঙে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। কোথাও আবার দেওয়ালে মাথা তুলেছে বট-অশ্বত্থ। সেতুর গোটা পথেই তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সব থেকে বড় কথা, সেতুটির এক পাশ জুড়ে তৈরি হয়েছে পার্কিং। দিনরাত সেখানে অজস্র বাস, মিনিবাস-সহ বিভিন্ন যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকায় সেতুর একটা দিক এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।
হাওড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র হাওড়া ময়দান থেকে হাওড়া স্টেশনের রেললাইনের উপর দিয়ে এই সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল হাওড়া ব্রিজ ও স্টেশনে সহজে পৌঁছনোর জন্য। এখন ওই সেতুর প্রায় গোড়াতেই তৈরি হচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর প্রান্তিক স্টেশন হাওড়া ময়দান। স্বাভাবিক ভাবেই এই কর্মকাণ্ডের রেশ পড়েছে সংলগ্ন এলাকায়। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর খোঁড়াখুঁড়ির জন্য রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। ফলে গত পাঁচ-সাত বছর ধরে নাজেহাল অবস্থা এলাকার বাসিন্দাদের।
যানবাহনের ধাক্কায় হাওড়া জেলা স্কুলের দিকে সেতুর রেলিং ভেঙে ঝুলছে। যে কোনও দিন সেটি ভেঙে পড়তে পারে। অথচ, ঠিক নীচেই রাস্তা দিয়ে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা যাতায়াত করে। মঙ্গলবারের হাটও বসে ওই রাস্তায়। একই অবস্থা ঠিক তার উল্টো দিকে সেতুতে ওঠার লোহার সিঁড়ির। মরচে পড়ে ভঙ্গুর অবস্থা হয়েছে সেটির। সেতুর লাইটের জয়েন্ট বক্স সব খোলা।
সেতুটির অবস্থা যে খারাপ, তা মানছেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারাও। এসিপি (ট্র্যাফিক) অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা পুরসভাকে এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছি।’’
কিন্তু পুরসভা কি সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে?
হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাওড়া পুরসভায় সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারের পদ কোনও কালেই ছিল না। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পুরসভার নয়। এই দায়িত্ব পূর্ত দফতরের।’’
কিন্তু পূর্ত দফতরও এই দায়িত্ব মানতে নারাজ। পূর্ত দফতরের হাওড়ার দায়িত্বে থাকা এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শমীজিৎ মাইতি বলেন, ‘‘বঙ্কিম সেতু কোনও দিনই পূর্ত দফতরের ছিল না। তাই রক্ষণাবেক্ষণেরও প্রশ্ন ওঠে না।’’
তা হলে সেতু মেরামত করবে কে?
হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আসলে সেতুটির সিংহভাগ রেলওয়ে ওভারব্রিজ। তাই মেরামতির প্রধান দায়িত্ব রেলের। কিন্তু বাকি অংশ কার, তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশ না থাকায় হাওড়া পুরসভাই ছোটখাটো মেরামতি করে দেয়। এ বার হয়তো কেএমডিএ করে দেবে।’’
এ বিষয়ে হাওড়ার দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সমীর ঘোষও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘‘শুনছি তো মেরামতির প্রস্তুতি চলছে। কেউ না কেউ তো করবেই। ঠিক বলা যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy