প্রতীকী ছবি।
এলাকা থমথমে। মাদক ব্যবসা নিয়ে ক্ষোভ জায়গায় জায়গায়। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন অনেকের।
সংক্ষেপে এটাই ছিল শনিবারের পাঙ্খাটুলি। চুঁচুড়ার যে এলাকায় হেরোইন এনে না-দেওয়ায় শেখ সমীর নামে এক প্রতিবন্ধী যুবককে খুন করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতী শেখ পটলকে শুক্রবার পিটিয়ে মেরেছিল জনতা। গণপিটুনির ঘটনায় পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে ঠিকই। কিন্তু মাদক ব্যবসা বন্ধে পুলিশ এখনও উদ্যোগী হয়নি, এ দিন সেই অভিযোগও শোনা গিয়েছে।
গণপিটুনির পরেই মাদক-ব্যবসা চালানোর অভিযোগে ওই এলাকার তিনটি গুমটি দোকান এবং দু’টি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছিল জনতা। বহু মহিলা, এমনকী ছোটরাও বাঁশ-লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। ক্ষোভ যেখানে এত তীব্র, সেখানে কেন এতদিন পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি?
ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গুমটি-দোকান থেকে প্রকাশ্যেই মদ-মাদকের ব্যবসা চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। সবাই জানত। পুলিশও জানত। মদ-গাঁজার আকর্ষণে এখানে বাইরের দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়েছে। এলাকার ছোট ছেলেরাও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এক মহিলার কথায়, ‘‘হেরোইনের ব্যবসা নিয়ে মানুষের রাগ ছিলই। প্রতিবন্ধী ছেলেটাকে খুনের পরে পুলিশের উপর ভরসা রাখতে না-পেরেই লোকজন পটলকে বেধড়ক পেটান।’’
পাঙ্খাটুলি এলাকাটি ব্যান্ডেল-নৈহাটি শাখার হুগলি ঘাট স্টেশনের পাশে। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, শুধু ওই এলাকাই বা কেন, রিষড়া, উত্তরপাড়া, শেওড়াফুলি, চুঁচুড়া, চন্দননগর, হুগলি, ব্যান্ডেল-সহ বিভিন্ন স্টেশনের আশপাশে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত মদ-চোলাইয়ের আসর বসে। দেখেও দেখে না পুলিশ।
অভিযোগ উড়িয়ে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশের দাবি, গত কয়েক মাসে বেশ কিছু দুষ্কৃতীর কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। মাদক বিক্রি বা পাচারের খবর পেলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। এ বার পাঙ্খাটুলিতেও পুলিশি অভিযান বাড়ানো হবে। গণপিটুনির অভিযোগে ধৃত শেখ সমীর আলি, অমর দাস, শেখ রমজান, রাজু রজক এবং শেখ লাল্টুকে শনিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক রাজু এবং অমরকে ৬ দিন পুলিশ হাজত এবং বাকীদের ১৪ দিন জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ধৃতদের মধ্যে কয়েক জন মাদক ব্যবসায় জড়িত। পটল তাদের থেকে হেরোইন কিনে টাকা দিচ্ছিল না। তা নিয়ে পটলের উপর তাদের রাগ ছিল। শুক্রবার সকালে জনতা পটলকে মারধর শুরু করলে তারাও হাত লাগায়।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে ওই ঘটনায় যুক্ত বাকীদের চিহ্নিত করে ধরার চেষ্টা চলছে। মাদক ব্যবসা যাতে পুরোপুরি বন্ধ হয়, সেই চেষ্টাও চালানো হবে।’’
পাঙ্খাটুলির ঘটনার পরে হুগলির এই সদর শহরে কেন দুষ্কৃতী-রাজে লাগাম পরানো যাচ্ছে না, সে প্রশ্ন আগেই উঠেছে। একই সঙ্গে পুলিশের উপরে ভরসা হারানোতেই মানুষ বারবার নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছেন, এ কথাও বলছেন শহরের অনেক প্রবীণ। এক বছর আগে কালীপুজোর মুখে এক যুবতীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করায় চুঁচুড়ারই লেনিননগরে গোপাল মজুমদার ওরফে বুড়ো নামে এক দুষ্কৃতীকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে পিটিয়ে মেরেছিল জনতা। প্রতিরোধ করতে এসে গণপিটুনিতে মারা যান ওই দুষ্কৃতীর মা-ও।
পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, জেলার কুখ্যত দুষ্কৃতীদের প্রায় সবাই এখন গারদের পিছনে। দুষ্কর্ম রুখতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy