চিহ্ন: রবিবার দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের এই ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মেরেই দুর্ঘটনা ঘটে। সোমবারও ট্রাকটি সেখানেই দাঁড়িয়ে। ছবি: দীপঙ্কর দে
ফের দুরন্ত গতি। ফের মৃত্যু। ঠিকানা সেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে।
জাতীয় সড়ক পরিবহণ সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডানকুনি থেকে পালসিটের রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে একটি করে দুর্ঘটনা ঘটে। গতি-বিধি না মানাতেই বারবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে নানা গাড়ি, মনে করছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের কর্তারা।
২০১৬ সালে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনা ঘটে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে। কানঘেঁষে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এরপর এই রাস্তাতেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হয় শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের। তার পর অনেক হইচই হয়। কিন্তু দুর্ঘটনা কমেনি। মাস কয়েক আগেই গরম পিচের ডাম্পারে ধাক্কা মেরে একই পরিবারের ছয় জন মারা যান। মাঝে ওই রাস্তাতেই দুর্ঘটনায় মারা যান এক সিভিক ভলান্টিয়ার। ফের রবিবারের দুর্ঘটনা।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে পরপর দুর্ঘটনার পরে পুলিশের নজরদারি বেড়েছে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা। তার ফের প্রমাণ মেলে রবিবার। দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে গাড়ি ধাক্কা মারায় মারা যান তিন জন। ‘টোল’ দিয়ে ওই রাস্তা ব্যবহার করেন গাড়ি-চালকেরা। কিন্তু কিছুতেই ওই সড়কে দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে মানুষদের সচেতনতাকে দুষছে পুলিশ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, বাড়তি গতি ছাড়াও ‘লেন’ ভাঙার প্রবণতাও দুর্ঘটনা ডেকে আনছে।
বার বার দুর্ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের নিত্যযাত্রীদের মধ্যে। তাঁদের দাবি, দুর্ঘটনা কমাতে গতিতে রাশ টানুক প্রশাসন। উত্তরপাড়ার কোতরং এলাকার এক বাসিন্দা নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন ওই রাস্তা দিয়ে দুর্গাপুরে যেতে হয়। বাড়ি থেকে আপত্তি করছে। ভাবছি ট্রেনেই যাব।’’
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে দানা গিয়েছে, ডানকুনি থেকে পালসিট পর্যন্ত প্রতিদিন ১১ থেকে ১২ হাজার গাড়ি যায়। এই রাস্তায় প্রতি দিন ২২ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার টোল আদায় হয়। নিত্যযাত্রীদের একাংশ দাবি তুলেছেন, চার লেনের গতির কাঁটা ভিন্ন ভিন্ন করতে।
যদিও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলেন, ‘‘এক্সপ্রসওয়েকে গতির প্রশ্নে বাধা যায় না। গতিতে যাওয়ার জন্যই মানুষ টোল দেন।’’ তিনি জানান, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে যে প্রযুক্তিতে তৈরি, সেখানে সাধারণত সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে গাড়ি চলতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই গাড়ির চালকেরা সেই গতি ভেঙে দুর্ঘটনা ডেকে আনেন। এছাড়াও সময় এবং জ্বালানি বাঁচাতে অনেক সময়ে গাড়ি-চালকেরা উল্টো লেনে ঢুকে পড়েন। মুহূর্তের ভুলে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত না গিয়ে কাছের ‘শার্প কাট’ (যে পথে গাড়ি ঘোরানো যায়) দিয়ে গাড়ি ঘোরাতে গিয়েও অনেক সময়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তার দু’লেনের মাঝ দিয়ে যাতে গাড়ি চলাচল না করে আমরা তার চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের নানা ভাবে চাপ দেওয়া হয়।’’ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘মানুষ যাতে সচেতন হন সেই লক্ষ্যে আমরা প্রচার করছি। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নানা সময় বৈঠক হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy