পুকুরে জমছে আবর্জনা। বৈদ্যবাটী স্টেশন রোডে ১৭ নম্বর নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: দীপঙ্কর দে।
অসন্তোষ ছিলই। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট শহরবাসীর সেই অসন্তোষ আরও উসকে দিল।
শহরের জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে বৈদ্যবাটীর বাসিন্দাদের ক্ষোভ আজকের নয়। ডান থেকে বাম, বাম থেকে ডান— পুরসভার হাতবদল হলেও আবর্জনা সাফাই বা নিকাশির দুর্দশা ঘোচেনি বলে অভিযোগ। কেন্দ্রের আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ সমীক্ষা’র সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, দেশের নোংরা শহরগুলির মধ্যে রয়েছে এই শহরের নাম। এ কথা জানার পরেই চর্চা শুরু হয়েছে শহরে। পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছেন, সুষ্ঠু পরিকাঠামো গড়তে যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে।
নওঁগার মোড় ছাড়িয়ে জিটি রোড ধরে শেওড়াফুলি হয়ে বৈদ্যবাটী স্টেশন যাওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকে আবর্জনা। বৈদ্যবাটী চকের বিস্তীর্ণ এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। অভিযোগ, দিনের পর দিন ধরে নর্দমা দিয়ে আশপাশের খাটালের গোবর গিয়ে মেশে চাষের জমিতে। নষ্ট হচ্ছে বিঘের পর বিঘে চাষজমি। কাজিপাড়া, নার্সারি রোড, বৈদ্যবাটী স্টেশন চত্বর, বাগদিপাড়া, পম্পানগর, বিদ্যাসাগর পল্লি, সানপুকুর ধার-সহ নানা এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল জমে। সাফাই নিয়ে অভিযোগ বিস্তর।
বিরাজ কুঠির মিষ্টি ব্যবসায়ী গণেশ পাসোয়ানের ক্ষোভ, ‘‘আমার দোকানের সামনের ভ্যাট নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। নিকাশির সমস্যাও রয়েছে। কেন্দ্রের রিপোর্ট ঠিক তথ্যই তুলে ধরেছে। আমরাই কুয়ো খুঁড়ে নিয়েছি বর্জ্য জল ফেলার জন্য।’’ ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা দত্তের খেদ, ‘‘সাফাই নিয়মিত হয় না।’’
কৃষিজমি বাঁচাতে বছর দশেক আগে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ‘বৈদ্যবাটী চক ও দীর্ঘাঙ্গ মৌজা কৃষিজমি উন্নয়ন সমিতি’। সমিতির অভিযোগ, খেতে নোংরা জল এসে মিশছে। আদালত পুরসভাকে সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা গড়ার নির্দেশ দিলেও কোনও ব্যবস্থাই হয়নি।
পুরকর্তাদের একাংশ মানছে, শহরের নিকাশি সমস্যা বহু পুরনো। দিল্লি রোড ঘেঁষা অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় বসতি গড়ে ওঠায় সমস্যা বেড়েছে। পুর-পারিষদ সুবীর ঘোষ বলেন, ‘‘বৈদ্যবাটী চকের জলটা যাতে খালে ফেলা যায়, সে ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। দিল্লি রোডের ধার দিয়ে যে খালে নিকাশি জল পড়ে, সেটি সংস্কারের জন্য সেচ দফতরকে চিঠি দিয়েছি। এই কাজ হয়ে গেলে আর সমস্যা থাকবে না। তবে সমীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে।’’
পুরপ্রধান অরিন্দম গুঁইনের বক্তব্য, ‘‘পুরসভা বাড়ি বাড়ি জঞ্জাল সংগ্রহ করে। তা থেকে সার তৈরি হয়। সার্বিক ভাবে এলাকা সাফাইতেও পুরসভা অনেকটা এগিয়েছে। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে এবং যত্রতত্র আবর্জনা মানুষ যাতে না ফেলেন, সে প্রচার চলছে। মানুষ সচেতন হলে আবর্জনা জমার সমস্যা থাকবে না।’’
তবে, পুরপ্রধান সাফাই নিয়ে ওই দাবি করলেও মাঝেমধ্যেই আবর্জনা অপসারণ নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কখনও বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা ফিরে যাওয়ায় সার তৈরির প্রকল্প বন্ধ থেকেছে, কখনও সাফাইকর্মীদের আন্দোলনের জেরে আবর্জনায় শহর মুখ ঢেকেছে। পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের অনেকেই মনে করেন, পরিকাঠামোর অভাবের পাশাপাশি নাগরিকদের একাংশের গয়ংগচ্ছ ভাব পরিস্থিতির জন্য দায়ী। শহরের বাসিন্দা হিমাদ্রি চৌধুরী বলেন, ‘‘পুরসভা বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করা সত্ত্বেও অনেকে রাস্তাতেই বা পুকুরে আবর্জনা ফেলেন। এতে শহরটা নোংরা হয়। দূষণ ছড়ায়। পুরসভা কড়া না হলে সমস্যা মিটবে না।’’ এই অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সম্প্রতি শহরে সভাও করেন নাগরিকদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy