সুশ্রীত দত্ত ও অভিজিৎ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।
নম্বরের বিচারে দু’জনেই সফল। মেধাবী ছেলে দু’টি ভূগোলে উচ্চশিক্ষা করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু সেই ইচ্ছের পথে অন্তরায় পরিবারের অভাব। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করলেও দারিদ্রকে হারিয়ে ওদের পড়াশোনা কতদূর চালানো যাবে, সেই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই ওদের পরিবারের। তবে যে কোনও পরিস্থিতিতেই অভাবকে হারিয়ে জিততে ওরা বদ্ধপরিকর।
এক জন চণ্ডীতলার উত্তর গঙ্গাধরপুর গ্রামের বাসিন্দা অভিজিৎ চক্রবর্তী। অন্য জন রিষড়ার ৩ নম্বর নতুনগ্রামের সুশ্রীত দত্ত। বাড়ুইপাড়া রাখাল বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিল অভিজিৎ। ৪১০ নম্বর পেয়ে সে উত্তীর্ণ হয়েছে। ইংরেজিতে তার প্রাপ্ত নম্বর ৮২, ভূগোলে ৮০ আর অর্থনীতিতে সে পেয়েছে ৯৫। অভিজিতের স্বপ্ন, ভূগোলের শিক্ষক হওয়ার। টালির চালের বাড়িতে বাবা-মা আর দাদার সঙ্গে থাকে অভিজিৎ। বাবা ভোলানাথবাবু অসুস্থ। তিনি ঘুরে ঘুরে লজেন্স বিক্রি করেন। মা সুনীতাদেবী ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কাজ করেন। দাদা দেবজিৎ লালবাবা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার খরচ জোগাতে তিনি একটি গ্যারাজে গাড়ি সারানোর কাজ করেন। আর অভিজিৎ ছাত্র পড়ায়।
অভিজিৎ জানায়, এত দিন স্কুলের শিক্ষকেরা সাহায্য করেছেন। দু’জন গৃহশিক্ষক বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন। কিন্তু এ বার কী করে পড়ার খরচ জোগাড় হবে, ভেবে পাচ্ছে না সে। ভোলানাথবাবু বলেন, ‘‘দুই ছেলেই নিজেদের পড়ার খরচ নিজেরাই চালিয়েছে। এ বার কী হবে জানি না।’’
অন্য দিকে, মাহেশ শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সুশ্রীত ৪২৫ নম্বর পেয়ে সকলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ভূগোলে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৫। অর্থনীতিতে ৯৭। সে চায় ভূগোল নিয়ে গবেষণা করতে, কলেজে পড়াতে। কিন্তু তার পরিবারও সচ্ছল নয়। ছেলের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগানো নিয়ে তাই চিন্তার শেষ নেই বাবা-মায়ের। সুশ্রীত জানায়, বাবা সুভাষবাবু এবং দাদা সুপ্রীত রিষড়া স্টেশন বাজারে পান-সিগারেটের গুমটি চালান। সেটিই পরিবারের একমাত্র রোজগার। মা সুলতাদেবী গৃহবধূ। সুভাষবাবু জানান, ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করতে চেষ্টায় খামতি রাখতে চান না তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সব খরচ জোগাড় করতে পারবেন কি না, সেটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর কাছে।তাঁর কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy