যানবাহনের অভাবে ভুগলেন নিত্যযাত্রীরা। আরামবাগে। ছবি: সুব্রত জানা।
আশঙ্কাই সত্যি হল।
তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের জন্য শনিবার সকাল থেকে পথে বেরিয়ে নাস্তানাবুদ হলেন দুই জেলার সাধারণ মানুষ। বাস উধাও হয়ে গিয়েছিল। অটো-ট্রেকারের মতো যাত্রিবাহী গাড়িও কম চলেছে। শুধু দেখা গিয়েছে, দলীয় পতাকা লাগানো তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ব্রিগেডমুখী গাড়ির দৌড়। ট্রেনগুলিতেও তিলধারণের জায়গা ছিল না। পূর্ব রেলের হাওড়ামুখী মেন, কর্ড এবং দক্ষিণ পূর্ব রেলের সব শাখাতেই ছিল একই অবস্থা।
হুগলির ধনেখালি, দাদপুর, পোলবা-সহ বিভিন্ন জায়গার মানুষ বাসের উপরে নির্ভরশীল। বাস না-মেলায় তাঁরা সমস্যায় পড়েন। সকাল সওয়া ন’টা নাগাদ চুঁচুড়া স্টেশনে বসেছিলেন দাদপুরের অনন্ত সাধুখাঁ। হাওড়ার একটি বেসরকারি সংস্থায় তিনি চাকরি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘কাজে না-গেলে একদিনের বেতন কেটে নেবে। তাই বেরিয়েছিলাম। বাস না-পেয়ে ভাড়া গাড়িতে চুঁচুড়া স্টেশনে এলাম। যা ভিড়, কয়েকটা ট্রেন ছেড়ে দিতে হল।’’
পান্ডুয়া-কালনা, চুঁচুড়া-মেমারি রুটেও বাস না-থাকায় বিকল্প হিসাবে অনেককেই বেশি ভাড়া গুনে যাত্রিবাহী গাড়িতে চড়তে হয়েছে। গন্তব্যে পৌঁছতে একাধিক বার গাড়ি বদলাতে হয়েছে। জ্যোৎস্না পাত্র নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘পান্ডুয়া স্টেশন থেকে মণ্ডলাই যাই ৮ টাকা ভাড়ায়। আজ অটোয় যেতে ২০ টাকা খরচ হল।’’ সকালে ডানকুনি হাউজিংয়ের কাছে যাত্রিবাহী গাড়িতেই কার্যত চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে সাধারণ মানুষকে যেতে দেখা গেল। ব্রিগেড সমাবেশের জন্য আরামবাগ মহকুমায় মঙ্গলবার থেকেই বাস উধাও হতে থাকে। এ দিন এখানেও দেখা গিয়েছে একই ছবি।
গ্রামীণ হাওড়াতেও বাস ছিল না বললেই চলে। বিশেষ করে সমস্যায় পড়েন উদয়নারায়ণপুরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, জেলার অন্যত্র রেলপথে যোগাযোগের সুবিধা থাকলেও উদয়নারায়ণপুরে নেই। এখানকার রামপুর-ডিভিভুরসুট এবং পাঁচারুল থেকে হাওড়া পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ৫০টি বাস চলে। সবগুলিই তুলে নেওয়া হয়েছিল সমাবেশের জন্য। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব কথা দিয়েছিলেন আমতা থেকে উদয়নারায়ণপুরে ট্রেকার এবং অটো চলবে। কিন্তু এ দিন অটো-ট্রেকার কার্যত ছিল না।
ব্রিগেড সমাবেশের জন্য দুই জেলাতেই শুক্রবার রাত থেকে যান নিয়ন্ত্রণে নামে পুলিশ। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার পর আর ডানকুনি-বালি থেকে ব্রিগেডমুখী গাড়ি নড়েনি। দুপুর ১২টা নাগাদ ডানকুনি টোলপ্লাজায় বর্ধমান থেকে আসা সাকির আলিরা বুঝে যান, এ বারের ব্রিগেড তাঁদের কাছে অধরা থেকে গেল। অতঃকিম? রাস্তাতেই ‘পিকনিক’! বক্সে গান।
দুপুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর বর্ধমানের জামালপুর থেকে গুড়াপ, ধনেখালির মহেশ্বরপুর থেকে সিঙ্গুরের কাপাসহাড়িয়া— সর্বত্র চোখে পড়েছে ব্রিগেড যেতে না-পারা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের পিকনিকের আসর। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘আমরা কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই সারাদিন কাজ করেছি। কলকাতায় ব্রিগেড যাওয়ার গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় পথে পথে আমাদের আটকাতে হয়েছে। কারণ, সেখানে ঢোকার পরিস্থিতি ছিল না।’’
বর্ধমানের গলসি থেকে ভোরে দু’টি বাসে ১৪০ জনকে নিয়ে ব্রিগেড রওনা হন সুকুমার খামারু। তিনি জানান, বালির নিবেদিতা সেতুতে ওঠার আগেই পুলিশ বাস ঘুরিয়ে দেয়। তাই জাতীয় সড়কের ধারে পিকনিক সেরে বাড়ি ফিরবেন তাঁরা। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থেকে আসা অপূর্ব কর্মকারও এ বার ব্রিগেডের পথে আটকে গিয়েছেন। তবে দলবল নিয়ে মুরগির মাংসের ঝোল-ভাত, চাটনি, পাঁপড়ে মেতেছেন রাস্তায়। একই ছবি দেখা গিয়েছে, হুগলির আরামবাগ-তারকেশ্বর রোড, দিল্লি রোড, অহল্যাবাই রোডেও।
গ্রামীণ হাওড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারেও পাত পেড়ে খাওয়ার আসর বসিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের কিছু গাড়ি ব্রিগেড যেতে পেরেছে। কিছু গাড়িকে ফিরে যেতে হয়েছে। তবে, খাওয়া-দাওয়ার পরে থার্মোকলের থালা-বাটি পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে রাস্তাতেই। যা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানান, সাফাইকর্মী দিয়ে ওই সব আবর্জনা পরিষ্কার করা হবে। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘বহু মানুষ সভায় গিয়েছেন। হয়তো কিছু মানুষ রাস্তায় খাওয়া-দাওয়া সেরেছেন। কোথাও যদি নোংরা হয়ে থাকে তা হলে আমাদের কর্মীরাই পরিষ্কারের দায়িত্ব নেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy