Advertisement
১৭ মে ২০২৪
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

ছাত্রভোট ঘিরে উত্তাল চাঁপাডাঙা কলেজ

হুগলি জেলার অন্যত্র ছাত্র নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলার কাজ বৃহস্পতিবার নির্বিঘ্নে মিটলেও ব্যতিক্রম হয়ে রইল তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা কলেজ চত্বর। তৃণণূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কলেজ চত্বর।

পুলিশকে লক্ষ্য ছোড়া হল বোমা।

পুলিশকে লক্ষ্য ছোড়া হল বোমা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

হুগলি জেলার অন্যত্র ছাত্র নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলার কাজ বৃহস্পতিবার নির্বিঘ্নে মিটলেও ব্যতিক্রম হয়ে রইল তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা কলেজ চত্বর। তৃণণূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কলেজ চত্বর। মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ল। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দিকেও বোমা উড়ে আসে। বাঁশ-লাঠি নিয়ে রাস্তায় আস্ফালন করল একদল ছাত্র এবং বহিরাগত। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয় হামলাকারীদের। শেষে লাঠি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে, বন্দুক উঁচিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। গোলমালে জখম হ‌ন তিন সিভিক ভলান্টিয়ার। রাতে চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলা তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্তের সঙ্গে উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডুর বিরোধেরই ছায়া পড়েছে কলেজ ভোটের মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে। এ নিয়ে স্বপনবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। উত্তমবাবুর দাবি, ‘‘অকারণে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে।’’ আর এত কিছুর পরেও তারকেশ্বরের বিধায়ক তথা কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি রচপাল সিংহের দাবি, ‘‘কোনও গোলমাল হয়নি। কলেজের ভিতরে-বাইরে যথেষ্ট পুলিশি নিরাপত্তা ছিল।’’

তবে, কলেজের টিচার-ইন-চার্জ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মনোনয়ন তুলতে আসা কিছু ছাত্র কলেজে কার্যত অস্ত্র-ভাণ্ডার বানিয়ে ফেলেছিল। তাদের সঙ্গে বহিরাগতেরাও যোগ দেয়। তিনি বলেন, ‘‘বহিরাগত কেউ মনোনয়ন তুলেছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। এমনটা হলে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াই বাতিল করা হবে।’’

আহত এক পুলিশ কর্মী। বৃহস্পতিবার দীপঙ্কর দে’র তোলা ছবি।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত হুগলির ২৩টি কলেজে এ দিন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়। এ নিয়ে সকাল থেকেই তেতে ছিল চাঁপাডাঙার কলেজটি। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলে ঠিক হয়েছিল, প্রত্যেকেই মনোনয়ন তুলবেন। পরে দলের তরফে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হবে। দুই গোষ্ঠীর ছেলেরা আলাদা সময়ে মনোনয়ন তুলবে বলেও ঠিক হয়। কিন্তু উত্তম-গোষ্ঠীর ছেলেরা সকাল থেকেই কার্যত কলেজের দখল নেয়। গোলমালের আশঙ্কায় বিশাল পুলিশ বাহিনী কলেজের সামনে মোতায়েন ছিল। কিন্তু গোলমাল এড়ানো যায়নি।

বেলা দেড়টা নাগাদ স্বপনবাবু এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুমনা ঘোষের নেতৃত্বে একটি মিছিল আসে। তখন ওই গোষ্ঠীর ছেলেরা কলেজে ঢোকেন। অভিযোগ, সেই সময় উত্তম ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল কর্মীর নেতৃত্বে একদল ছেলে বোমাবাজি শুরু করে। পুলিশকে লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়। তবে, তাতে পুলিশের কেউ জখম হননি। গোটা এলাকা বোমার ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। বেগতিক বুঝে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে হামলাকারীদের তাড়া করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। একাধিক পুলিশকর্মীকে দেখা যায়, বন্দুক উঁচিয়ে ধরতে। এই অবস্থায় হামলাকারীদের কেউ কেউ স্থানীয় তৃণমূল কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে।

তারকেশ্বর থানার ওসি অমিত মিত্রের নেতৃত্বে পুলিশ সেখান থেকে জনা ত্রিশেক বিক্ষোভকারীকে আটক করে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি হাত-কামান এবং কয়েকটি না-ফাটা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এসডিপিও (চন্দননগর) রানা মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছন। শেষ পর্যন্ত উভয় গোষ্ঠীর পড়ুয়ারাই মনোনয়ন তোলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Internal conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE