প্রতীকী ছবি।
তৃণমূলের দাপটে প্রায় ৮ মাস ঘরছাড়া পঞ্চায়েতের পাঁচ এবং পঞ্চায়েত সমিতির দুই নির্বাচিত সদস্য। তাঁরা অবশ্য সকলেই তৃণমূলের টিকিটেই পঞ্চায়েত নির্বাচন জিতেছিলেন। আসলে আমতা-১ ব্লকের চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য। তবে শাসকের দু’দলের কোন্দলে ঘরেই ফিরতে পারছেন না চন্দ্রপুরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।
তবে শুধু ওই সাত জন নন। অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গেই ঘরছাড়া তাঁদের অনুগামীরাও। স্থানীয় সূত্রে খবর, সংখ্যাটা প্রায় ৭০। উলুবেড়িয়া উত্তরের বিধায়ক নির্মল মাজির কাছে তাঁরা গিয়েছিলেন বলে দাবি। কিন্তু নির্মল বলেছেন, ‘‘কেউ ঘরছাড়া আছেন কিনা আমার জানা নেই। সবাই গ্রামে থাকতে পারবেন। তবে কয়েকজন তোলাবাজি করছিলেন। গ্রামবাসীরাই হয়তো তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েছেন।’’
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই আগের বোর্ড প্রধানের স্বামী আসফার এবং তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা শেখ ফারুকের দ্বন্দ্ব ছিল। কোন গোষ্ঠীর কতজন টিকিট পাবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বোমাবাজিও হয়। শেষ পর্যন্ত উপরতলার নেতাদের মধ্যস্থতায় ঠিক হয়, পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে ৬টি দেওয়া হবে ফারুকের গোষ্ঠীকে। বাকি ৫টি দেওয়া হবে আসফারের গোষ্ঠীকে। যে তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির আসন আছে তার মধ্যে ১টি পাবে ফারুকের গোষ্ঠী। ২টি পাবে আসফারের গোষ্ঠী।
বিরোধীরা প্রার্থী দিতেই পারেনি। আসফারের গোষ্ঠীর অভিযোগ, নির্বাচনের পরেই তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন অত্যাচার শুরু করে। তাঁর গোষ্ঠীর ৫ জন পঞ্চায়েত সদস্য এবং ২ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যকে গ্রাম ছাড়া করা হয়। প্রধান করা হয় ফারুক গোষ্ঠীর মোসারফ মিদ্দাকে। কিন্তু সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করেছেন।
মোসারফ শারীরিক অসুস্থার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। কিন্তু দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি, ফারুক নিজে প্রধান হতে চান। একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা ছিল বলে প্রথমে প্রধান হতে পারেননি। সম্প্রতি হাইকোর্টে সে মামলা খারিজ হয়েছে। এখন তাই প্রধান হওয়ার পথের কাঁটা মোসারফকে সরানো হয়েছে। নির্মল মাজি অবশ্য বলেছেন, ‘‘মোসারফকে দলের কাজে বেশি করে লাগানো হবে। প্রধান হিসাবে তিনি সময় দিতে পারছিলেন না।’’
গ্রামছাড়া পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, ফারুকের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর হওয়ায় তাঁরা যাতে তাঁর দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের প্রতিবাদ করতে না পারেন তাই তাঁদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আসফারের এক অনুগামী শেখ ইমরান বলেন, ‘‘কোন গোষ্ঠীর কতজন টিকিট পাবেন সে জন্য যে সমন্বয় কমিটি করা হয়েছিল আমি ছিলাম তার সভাপতি। নির্বাচনের পরে আমাকেও গ্রামছাড়া করা হয়।’’
পঞ্চায়েত সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘আমাকে সপরিবারের শুধু তাড়ানোই হয়নি। ঘরবাড়িও লুঠ করা হয়েছে। গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলে খুন করার হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘গ্রাম থেকে বহু মানুষ আমাকে ফোন করে তাঁদের অসুবিধার কথা বলছেন। আমি তো গ্রামে ঢুকতেই পারছি না!’’ শুধু তাই নয়, এই সব সদস্যদের নিজস্ব রুটিরুজিও বন্ধ। দুর্দশার কথা তাঁরা নির্মলবাবুকে জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
শেখ ফারুক বলেছেন, ‘‘যাঁরা গ্রামছাড়া তাঁরা তোলাবাজ। জনরোষের ভয়ে তাঁরা ফিরতে পারছেন না।’’
তোলাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘‘সব কিছু লিখিত ভাবে পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। ঘরছাড়াদের নামের তালিকাও জমা দিয়েছি।’’ জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘খোঁজখবর নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy