আদালতের পথে পুতুলদেবী।
ঘরে ঝুলছে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো মহিলার দেহ। খাটের উপরে পড়ে তাঁর বছর তিনেকের ছেলের মৃতদেহ। শনিবার রাতে হাওড়ার আমতায় মিল্কিচক গ্রামে মা ও ছেলের এ হেন মৃত্যুতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মহিলার মায়ের অভিযোগ, ইদানীং স্থানীয় এক মহিলার সঙ্গে জামাইয়ের সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল মেয়ে। এ নিয়ে জামাই তাঁকে মারধর করত, বাড়ি থেকে চলে যেতে বলত। এ ছাড়া পণের দাবিতেও মারধর করত। জামাই ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই মেয়ে ও তাঁর নাতিকে খুন করেছে। মৃতদের নাম রেখা পোড়েল (২৩) ও প্রিন্স পোড়েল (৩)। দেহ দু’টি ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশের (গ্রামীণ) এক কর্তা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে শ্বশুর গোপাল পোড়েল ও শাশুড়ি পুতুলদেবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ওই মহিলা তাঁর সন্তানকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন। কারণ প্রথমত, তাঁর হাতের শিরা কাটা ছিল এবং তাঁর শরীর থেকে কেরোসিন তেলের গন্ধও পাওয়া গিয়েছে। দেহের পাশ থেকে দু’টি না পোড়া দেশলাই কাঠিও উদ্ধার হয়েছে। মনে হয় যে কোনওভাবেই নিজেকে শেষ করে ফেলতে চেয়েছিলেন মহিলা। তবে ধৃতদের এবং রেখাদেবীর দেওরের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। জামাই শুভ ও তাঁর ভাই বিজু পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
মৃত রেখা ও প্রিন্স।-নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ ও রেখা দেবীর বাপের বাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে চাঁদনি এলাকার বাসিন্দা রেখার সঙ্গে পাশেই মিল্কিচক গ্রামের শুভ পোড়েলের বিয়ে হয়। শুভ আমতা-সাঁকরাইল রুটে বাসের কন্ডাক্টরি করেন। বছর তিনেক আগে তাঁদের একটি সন্তানও হয়। রেখা দেবীর মা শীতলা সিংহর অভিযোগ, অভাবের কথা বলে জামাই মাঝেমধ্যেই টাকা দাবি করত। এ জন্য মেয়ের সঙ্গে অশান্তিও হতো। মেয়েকে মারধরও করত ওরা। কিছুদিন হল, এলাকার এক মহিলার সঙ্গে জামাইয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে মেয়ে তাঁদের জানায়। তা নিয়ে অশান্তি করলে মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিত শুভ।
রেখাদেবীর দাদা হারু সিংহ বলেন, ‘‘রেখা আমাদের বাড়ি গিয়ে বলত, শুভ বলেছে ওকে নিয়ে আর ঘর করবে না। এ নিয়ে ওদের ঝগড়া হতো। তা সত্ত্বেও আমরা ওকে বুঝিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আলোচনায় ধীরে ধীরে সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু ওরা যে বোনকে মেরেই ফেলবে ভাবতে পারিনি।’’
শ্বশুর গোপাল পোড়েল।
যদিও খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুতুলদেবী। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ছেলে-বৌমা একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে। পরে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। তারপরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ছেলে। রাত ৯টা নাগাদ তিনি বৌমা ও নাতি কী করছে দেখতে তাদের ঘরে যান। তখনই দেখেন নাতি খাটের উপরে পড়ে আছে আর বৌমা ওড়নার ফাঁস গলায় লাগিয়ে ঝুলছে। এরপরই তিনি পুলিশকে খবর দেন। রবিবার ধৃতদের উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy