পুজোর মুখে এক চিলতে আলো পড়ল প্রায় ২০ বছর ধরে বন্ধ বাউড়িয়া কটন মিলে।
গত শুক্রবার নবান্নে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের ঘরে এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বর্তমান মালিকপক্ষ কারখানা খোলার ইঙ্গিত দিলেন। তবে, এখনই নয়। জমির মিউটেশন, বিদ্যুত্ সংযোগ, জলের সংযোগ-সহ পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা মিটিয়ে কারখানা খুলতে ৮-১০ মাস সময় লাগবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এই ইঙ্গিতে খুশি শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, তাদের আন্দোলনের জেরেই কারখানা খোলার ব্যাপারে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। কারখানা খোলার কাজ কতটা এগোচ্ছে তা সরকারের তরফ থেকে নিয়মিত নজরদারি ও পর্যালোচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ঋণ আদায় সংক্রান্ত (ডেটস রিকভারি) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে নিলামের মাধ্যমে ওই মিলটি কিনেছে ‘নেটওয়ার্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে কলকাতার একটি সংস্থা। সংস্থার এক পদস্থ কর্তা সোমবার বলেন, “আমরা কারখানা খুলতে বদ্ধপরিকর। সরকারের তরফ থেকে যেমন সহায়তা প্রয়োজন, তেমনই শ্রমিক সংগঠনগুলিও যেন আমাদের উপরে আস্থা রাখে।” শ্রমমন্ত্রীও জানান, কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। আইনসঙ্গত পথে তাঁদের সমস্যার যাতে দ্রুত সমাধান হয়, তা দেখা হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, প্রথম পর্যায়ে আড়াই হাজার শ্রমিককে নিয়োগ করা হবে। নিয়োগে অগ্রাধিকার পাবেন এখনও পর্যন্ত যাঁরা অবসর নেননি এবং অবসরপ্রাপ্তদের পরিবারের লোকজন। কর্তৃপক্ষ কারখানা খোলার ব্যাপারে কতটা এগোচ্ছেন, সে বিষয়ে তাঁরা ১৫ দিন অন্তর শ্রম দফতরকে রিপোর্ট দেবেন। শ্রম দফতরের আধিকারিকেরাও ১৫ দিন অন্তর কারখানা পরিদর্শন করবেন। মন্ত্রী নিজেও তিন মাস অন্তর বৈঠক করে কারখানার হাল পর্যালোচনা করবেন।
১৮৮৬ সালে ব্রিটিশ মালিকানাধীন এই মিল চালু হয়। পরে একাধিকবার মালিকানা বদল হয়। নয়ের দশকের শুরু থেকে কারখানাটি রুগ্ণ হতে থাকে। ১৯৯৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ কাজ হারান। বহু মামলা হয়। বিআইএফআর-এ শুনানি চলে। কিন্তু কারখানা আর চালু হয়নি। এর মধ্যে পাওনাদার ব্যাঙ্কগুলি সংস্থার বিরুদ্ধে ‘ডেটস রিকভারি ট্রাইব্যুনাল’-এ মামলা করে। ট্রাইবুনাল ২০১০ সালের অগস্টে কারখানাটি নিলামে তোলে। ৩১ কোটি টাকায় কারখানার সম্পদ কিনে নেয় ‘নেটওয়ার্ক ইন্ডাস্ট্রিজ’। ট্রাইবুন্যাল শর্ত দেয়, কারখানাটিকে ফের চালাতে হবে ওই সংস্থাকে।
গত শুক্রবার শ্রমমন্ত্রীর ঘরে শ্রমিক সংগঠনগুলির উপস্থিতিতে সেই শর্তমতোই কারখানা খোলার ইঙ্গিত দেন কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী হায়দর আজিজ সফির দাবি, তিনিও কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে কারখানা খোলার বিষয়ে উদ্যোগী হন।
কারখানা বন্ধ থাকা অবস্থায় অবসরপ্রাপ্তদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আদায় নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল ‘বাউড়িয়া কটন মিল সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়ন’। আন্দোলনের ফলে আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার কারখানার ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে নিজেরাই প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা শ্রমিকদের মধ্যে বিলি করার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো ২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পাচ্ছেন। ওই সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা কুশল দেবনাথ বলেন, ‘‘আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আদায় করতে পেরেছি। আশা করি কারখানা খোলা সম্ভব হবে। তবে, সরকারের অনেক বেশি তত্পরতা দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy