রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা এই লরিতেই ধাক্কা মারে গাড়িটি। ছবি: দীপঙ্কর দে।
তারাপীঠ থেকে পুজো দিয়ে ফেরার পথে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে গাড়ি ধাক্কা মারলে মৃত্যু হল তিন মহিলার। জখম হয়েছেন অন্তত ২০ জন। রবিবার ভোরে দুর্ঘটনাটি ঘটে হুগলির হরিপালে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে। পুলিশ জানায়, মৃত ভারতী পোদ্দার (৫৫), মীনা কুণ্ডু (৪৮) এবং মীনা পোদ্দার (৫০), তিন জনেরই বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার বাদুড়িয়া এবং বসিরহাট থেকে প্রায় ৩৫ জন একটি ছোট ট্রাকে চেপে তারাপীঠে গিয়েছিলেন। শনিবার রাতে সেখান থেকে রওনা দেন। উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণেশ্বর মন্দির ঘুরে বাড়ি ফিরবেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, গাড়িটি বেশ জোরে চলছিল। ভোর ৫টা নাগাদ হরিপালের মহেশটিকুরির কাছে একটি গাড়িকে বাঁদিক দিয়ে ওভারটেক করার পরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বালিবোঝাই একটি ট্রাকের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে গাড়িটি। সংঘর্ষের তীব্রতায় ছোট ট্রাকটি তুবড়ে যায়। যাত্রীদের অনেকেই ছিটকে পড়েন। ঘটনাস্থলেই ওই তিন মহিলার মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথমে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে হরিপাল এবং সিঙ্গুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আহতদের সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় চালক-সহ কয়েক জনকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মৃতদেহগুলি ময়না-তদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, রাস্তার ধারে বেআইনিভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দিনের দুর্ঘটনাও সেই কারণেই। অথচ হাইওয়েতে বেআইনি পার্কিং নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার। আহত এক যাত্রী রীনা দে বলেন, “আচমকা বিকট শব্দ হল। আমরা সবাই ছিটকে পড়লাম। সামনে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকাতেই এমনটা হল।” সঞ্জয় মণ্ডল নামে আহত আর এক যাত্রীর কথায়, “আমাদের গাড়িটা জোরে চলছিল। কুয়াশা ছিল। একটি গাড়িকে পাশ কাটানোর পরে ট্রাকটি যে দাঁড়িয়েছিল চালক বোধহয় খেয়াল করেননি।” তাঁর ক্ষোভ, “হাইওয়ের ধারে এই ভাবে ট্রাক দাঁড় করানো থাকবে কেন? পুলিশ-প্রশাসনের এ ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত। বেআইনি ভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার ফলেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল।”
দুর্ঘটনার পর তীর্থযাত্রীদের সেই গাড়ি।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে বেআইনি ভাবে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার সমস্যা নতুন নয়। যে কোনওদিন এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ডানকুনি থেকে পালসিট পর্যন্ত গেলেই এমন দৃশ্য চোখে পড়বে। অভিযোগ, ট্রাক পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও চালকেরা তা মানেন না। ফলে প্রতিনিয়তই ছোটবড় দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। অথচ পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয় না। চণ্ডীতলার কাপাসহাড়িয়ায় এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ট্রাক রাখার জন্য সরকারি জায়গা রয়েছে। চালক-খালাসিদের জন্য শৌচাগার বা স্নানের ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে। রয়েছে হোটেল। এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতি ত্রিশ কিলোমিটার অন্তর ওই ব্যবস্থা রয়েছে। তা সত্ত্বেও রাস্তার যে কোনও অংশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পাশের ধাবায় সময় কাটানোই চালক-খালাসিদের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি জেলা পুলিশের এক ইনস্পেক্টর এই কারণেই চণ্ডীতলায় দুর্ঘটনায় পড়েন। তাঁর গাড়ির চালক দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িকে এড়াতে গিয়ে রাস্তার বাফারে ধাক্কা মারেন। গুরুতর জখম হন ওই পুলিশ অফিসার। তার আগে জেলারই এক সাব-ইনস্পেক্টরও ঘনশ্যমপুরের কাছে দুর্ঘটনায় পড়েন। বছর কয়েক আগে চণ্ডীতলায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে ধাক্কা মারে ভিন্ রাজ্যের তীর্থযাত্রী বোঝাই একটি বাস। বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল ওই ঘটনায়। কিছুদিন আগে সিঙ্গুরের রতনপুরের কাছেও একই কারণে দুর্ঘটনা হয়। সাম্প্রতিক কালে এমন আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। যদিও, তারপরেও পুলিশ-প্রশাসনের সম্বিত্ যে ফেরেনি, ফের এই দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ডানকুনি হাউজিং মোড়, বড়া তেলিয়ার মোড়, রতনপুর মোড়, জয়মোল্লা, ঘনশ্যমপুর, দাদপুরের মতো কিছু জায়গা দুর্ঘটনাপ্রবণ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “নানা কারণে ওই জায়গাগুলিতে দুর্ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের দু’দিকে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি অবশ্যই অন্যতম কারণ। এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।”
অন্যদিকে, চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী ঠাকুর দেখে ফেরার পথে ট্রাকের সঙ্গে একটি গাড়ির ধাক্কায় জখম হলেন চার জন। শনিবার রাতে শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুরের কাছে দিল্লি রোডে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, আহতেরা সকলেই কলকাতার বাসিন্দা। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁদের মধ্যে এক জনকে প্রাথমিক চিকিত্সার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি তিন জনকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy