Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ভাইপোকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন

পারিবারিক অশান্তির জেরে নিজের একরত্তি ভাইপোকে পাটখেতে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল কাকার। চণ্ডীতলার কুমিরমোড়ার গাগরাপাড়ার বাসিন্দা জিয়াদুল মল্লিককে বুধবার ওই সাজা শোনান শ্রীরামপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সুমিত্রা রায়। তবে তথ্যপ্রমাণ লোপাটে অভিযুক্ত অন্য দুই অভিযুক্ত প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস হয়ে গিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০১:২৫
Share: Save:

পারিবারিক অশান্তির জেরে নিজের একরত্তি ভাইপোকে পাটখেতে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল কাকার।

চণ্ডীতলার কুমিরমোড়ার গাগরাপাড়ার বাসিন্দা জিয়াদুল মল্লিককে বুধবার ওই সাজা শোনান শ্রীরামপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সুমিত্রা রায়। তবে তথ্যপ্রমাণ লোপাটে অভিযুক্ত অন্য দুই অভিযুক্ত প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস হয়ে গিয়েছেন।

ঘটনাটি তিন বছর আগের। নিহত শিশুটির নাম সরফরাজ মল্লিক। ২০১১ সালের ২৩ জুন কুমিরমোড়ায় রমানাথপুর-ডোমজুড় রাস্তার ধারে একটি পুকুর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয় সাড়ে ৩ বছরের সরফরাজের দেহ। পুলিশ জানায়, তার এক দিন আগে থেকে সে নিখোঁজ ছিল। ফুটফুটে ছেলেটির মৃত্যুকে ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল গ্রাম। দেহ আটকে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা গ্রাম। তদন্তকারী অফিসারদের হাতে প্রথম সূত্র তুলে দিয়েছিল ব্যারাকপুর থেকে আসা একটি পুলিশ-কুকুর। যে পুকুর থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তার পাড়ে শোয়ানো মৃতদেহের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কুকুরটিকে। মাটি শুঁকতে শুঁকতে কাঁদামাখা রাস্তা, মাঠঘাট, জমির আল পেরিয়ে কুকুরটি সটান চলে গিয়েছিল পাটখেতে। সেখানে গিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পড়েছিল সে। ঘটনার কিনারা হতে দেখা যায়, কুকুরটির পর্যবেক্ষণ একেবারে সঠিক। কেননা, তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ওই পাটখেতেই শিশুটিকে খুন করা হয়েছিল।

মামলার সরকারি আইনজীবী জগৎজ্যোতি রায়চৌধুরী জানান, ঘটনার দিন সরফরাজ অঙ্গনওয়ারি শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ফিরে বাড়ির সামনে খেলছিল। সেই সময় জিয়াদুল তাকে গুটখা এবং পাঁপড় কিনতে দোকানে পাঠায়। ফিরে এলে ভাইপোকে বলে, সে তাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবে। এর পরে জিয়াদুল তাকে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের ওই পাটখেতে নিয়ে যায়। প্রথমে তাকে চড়-থাপ্পড় মারে। তার পরে ছেলেটির পরনের গেঞ্জি খুলে সেটির নীচের অংশ ছিঁড়ে তার হাত পা বেঁধে দেয়। তার পরেই নিজের হাতে ভাইপোকে গলা টিপে মেরে ফেলে সে। সেই সময় ঘটনাস্থলে অন্য কেউ ছিল না। পরে দু’জনের সাহায্য শিশুটির মৃতদেহ বস্তায় ভরে পুকুরের কাছে নিয়ে যায় জিয়াদুল। বস্তা থেকে দেহ বের করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। দেহ উদ্ধারের কয়েক দিন পরে শেখ ইসরাফিল নামে এলাকারই এক যুবক গ্রেফতার হয়। তার পরেই জিয়াদুলকে গ্রেফতার করেন চণ্ডীতলা থানার তৎকালীন ওসি সুখময় চক্রবর্তী। শেখ রহিম আলি ওরফে পাইলট নামে আরও এক জন ধরা পড়ে। ৯০ দিনের মধ্যেই আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী অফিসার। অভিযুক্তদের জামিন মেলেনি।

জগৎজ্যোতিবাবু বলেন, “মামলায় মোট ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। জিয়াদুলই যে ভাইপোকে খুন করেছেন, আদালতে তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।” মঙ্গলবার বিচারক সুমিত্রা রায় জিয়াদুলকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এ দিন বিচারক রায় দেন, শিশুটিকে খুনের দায়ে জিয়াদুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এ ছাড়াও, খুনের পরে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করায় তিন বছর কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাস কারাবাসের সাজা পাবে সে।

আদালতে পুলিশের দাখিল করা চার্জশিটে মূল অভিযুক্ত জিয়াদুল ছাড়াও ইসরাফিল এবং রহিমের নাম ছিল তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ওই দু’জন অবশ্য বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE