হোম সুপারের পরে এ বার গুড়াপের দুলাল স্মৃতি সংসদের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ শ্যামল ঘোষের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিলেন সেখানকার আরও দুই কর্মী। ওই হোমের আবাসিক গুড়িয়া হত্যা-মামলায় চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফার্স্ট কোর্ট) অরূপ বসুর এজলাসে বুধবার সাক্ষ্য দেন সেখানকার কর্মী মানিক মণ্ডল এবং হিসাবরক্ষক হরিনারায়ণ ভট্টাচার্য। ওই ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। উদয়চাঁদ এবং শ্যামলই মূল অভিযুক্ত।
এ দিন এজলাসে দাঁড়িয়ে মানিকবাবু বলেন, “শ্যামল ঘোষ ওই হোমের স্টাফ ছিল না। তা সত্ত্বেও সে ঘনঘন হোমে আসত। হোমের দু’টি ভাগ ছিল। একটি মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের আর একটা অসহায় মেয়েদের। হোমের মেয়েদের উপর সেক্রেটারি উদয়চাঁদ আর শ্যামল ঘোষ ‘টরচার’ (অত্যাচার) করত।” তিনি জানান, হোমের ২৩ নম্বর ঘরের আবাসিক গুড়িয়া মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। তিনি ঘটনার পাঁচ-ছয় মাস আগে ওই হোমে এসেছিলেন। মানিকবাবুর আরও দাবি, গুড়িয়ার ঘটনার আগেও আরও কয়েক জন মেয়ের দেহ বিভিন্ন সময়ে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। গুড়িয়ার বিষয়টি সামনে আসার পরে তিনি এ ব্যাপারে জানতে পেরেছিলেন।
এ দিন অপর সাক্ষ্যদানকারী হরিনারায়ণবাবু জানান, তিনি দশ বছর ওই হোমে কাজ করেছেন। আদালতে তিনিও বলেন, “শ্যামল ঘোষ হোমের কর্মী না হয়েও সেখানে যেত।” এর আগে হোমের তত্কালীন সুপার বুলবুল চৌধুরী আদালতে বলেছিলেন, উদয়চাঁদ এবং শ্যামল আবাসিক মেয়েদের উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাত। হোমের অন্য এক আবাসিককে শ্যামল ধর্ষণ করেছিল, এমনটাও তিনি শুনেছিলেন বলেও আদালতে দাবি করেন বুলবুলদেবী।
২০১২ সালের ১১ জুলাই গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি এলাকার ওই হোমের পাঁচিলের পাশে পুকুরের ধারের মাটি খুঁড়ে বছর বত্রিশের গুড়িয়ার পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর উপর অত্যাচার চালিয়ে খুন করা হয় এবং প্রমাণ লোপাট করতে মৃতদেহ পুঁতে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে চিকিত্সকের সই জাল করে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ও তৈরি করা হয়। শংসাপত্রে দেখানো হয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুড়িয়ার মৃত্যু হয়েছে। গুড়িয়া-কাণ্ড সামনে আসার পরেই বেসরকারি ওই হোমটি বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার। সেখানকার আবাসিকরা এখন রাজ্যের বিভিন্ন হোমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy