Advertisement
০২ মে ২০২৪

ফলন প্রচুর, বাজারে দাম না থাকায় চিন্তায় আম চাষিরা

হিমসাগর, আম্রপালি, বোম্বাই আমে ভরে গিয়েছে বাজার। দামও অনেকটা নাগালে। আম খেয়ে খুশি আমজনতা। কিন্তু মুখ ব্যাজার চাষিদের। অতি ফলনের জেরে দাম মিলছে না বাজারে। হুগলির গুপ্তিপাড়া, সিঙ্গুর, পোলবা— সর্বত্রই একই চিত্র। সিঙ্গুরের নাঁদা হাটতলায় আমের হাট বসে। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দরে আম কিনে নিয়ে যান। অন্য জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা আসেন।

সিঙ্গুরের হাটে ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

সিঙ্গুরের হাটে ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

প্রকাশ পাল
হুগলি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০১:২৮
Share: Save:

হিমসাগর, আম্রপালি, বোম্বাই আমে ভরে গিয়েছে বাজার। দামও অনেকটা নাগালে। আম খেয়ে খুশি আমজনতা। কিন্তু মুখ ব্যাজার চাষিদের। অতি ফলনের জেরে দাম মিলছে না বাজারে। হুগলির গুপ্তিপাড়া, সিঙ্গুর, পোলবা— সর্বত্রই একই চিত্র।

সিঙ্গুরের নাঁদা হাটতলায় আমের হাট বসে। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দরে আম কিনে নিয়ে যান। অন্য জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা আসেন। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে মালুম হল, প্রত্যেকের গাছেই অতিরিক্ত ফলন হয়েছে। যার জেরে তাঁরা কার্যত মুষড়ে পড়েছেন।

সিঙ্গুরের হাকিমপুরের বাসিন্দা অলোককুমার মাঝি বিঘে আটেক জমিতে আম চাষ করেছেন। হাটে এসেছিলেন হিমসাগর আম বেচতে। তাঁর কথায়, ‘‘এত বেশি আম ফলেছে যে, যাচ্ছেতাই অবস্থা। আম বেচে লাভ দূর অস্ত, চাষের খরচই উঠছে না।’’ চাষিরা জানালেন, দিন কয়েক আগে ওই হাটে এক পাল্লা (পাঁচ কিলোগ্রাম) আমের দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা। কখনও অবশ্য এর থেকে অনেক কম টাকায় বিক্রি করেছেন। অলোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘গত বছর এক পাল্লা হিমসাগর ১৩০ টাকার নীচে নামেনি। এ বার হাল খুবই খারাপ।’’ দশরথ সিংহরায় বা ষষ্ঠী দাসদেরও একই বক্তব্য। দশরথবাবু ছয় বিঘে জমিতে আম চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ফলন বেচে যত টাকা পাব ভেবেছিলাম, তার অর্ধেকও পাইনি।’’

প্রতি বছরই ওই হাট থেকে পাইকারি দরে আম কিনে নিয়ে গিয়ে খুচরো বিক্রি করেন শ্রীরামপুরের তপন দাস। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসায় লাভ-লোকসান তো আছেই। এ বার বেশি ফলনের জন্য বাজার মন্দা। লাভটা হচ্ছে কম।’’ ডানকুনির শেখ সেলিম বা দিলীপ রায়েরও বক্তব্য একই। এই মুহূর্তে খোলা বাজারে কিলোপ্রতি ২০-৩০ টাকায় হিমসাগর বিকোচ্ছে। ল্যাংড়ার দাম আরও একটু বেশি।

মাঘ-ফাগুনে গাছভরা মুকুল, চৈত্রের মাঝামাঝিতে ছোট ছোট আম দেখে এ বার ব্যাপক ফলনের আশা করেছিলেন হুগলির আমচাষিরা। দু’মাস আগে পাণ্ডুয়া, বলাগড়-সহ জেলার কয়েকটি জায়গায় শিলাবৃষ্টি তাঁদের সেই আশায় বাধ সেধেছিল। কিন্তু ওই সব জায়গার চাষিরাও জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত ফলনে তাঁরাও বেসামাল।

আমের ফলনের নিরিখে গুপ্তিপাড়া স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘দ্বিতীয় মালদহ’ হিসেবে চিহ্নিত। সরিখাস, গোলাপখাস, হিমসাগর, বোম্বাই, ল্যাংড়া, আম্রপালি-সহ নানা প্রজাতির আম হয় এখানে। দুর্গাপুর, আসানসোল, মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় এখানকার আম যায়। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহারের মতো ভিন্ রাজ্যেও পাড়ি দেয় গুপ্তিপাড়ার আম। উপযুক্ত দাম না পেয়ে এখানকার চাষিরাও এখন চিন্তিত। বিশেষত, যাঁরা বাগান লিজে নিয়ে আম ফলিয়েছেন, তাঁদের মাথায় হাত। চাষিরা জানালেন, লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে আগে টাকা জমা দিতে হয়। অনেকেই এ জন্য সুদে টাকা নেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা টাকা শুধবেন কী করে, সেটাই এখন প্রধান চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গুপ্তিপাড়ার ঘোষপাড়ার আম ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ বাগান লিজ নিয়ে আম ফলান। এ বার তিনি ১৮-২০ বিঘে জমিতে আম ফলিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাজারের যা অবস্থা, পুরোটাই লোকসান হচ্ছে। এক কিলোগ্রাম হিমসাগর ১০ টাকায় বেচতে হচ্ছে।’’ তিনি জানান, গত বছর ফলন কম ছিল। ভাল দাম মিলেছিল। এ বার অবশ্য পরিস্থিতি ভিন্ন। ওই এলাকারই অন্য এক চাষির বক্তব্য, ‘‘মজুর, কার্বাইড-সহ যা খরচ হয়, আম বেচে তা উঠছে কই!’’ চরকৃষ্ণবাটির চাষি সজল মণ্ডল জানালেন, কয়েক বিঘে জমিতে তাঁরা আম চাষ করেছেন। তিনি জানান, দাম না থাকায় এখনও আম পাড়া শুরুই করেননি। গাছে যে আম পেকে যাচ্ছে, সেগুলো বাড়িতে খাচ্ছেন বা আত্মীয়-স্বজনকে দিচ্ছেন।

ভদ্রেশ্বরের বিঘাটি পঞ্চায়েতের পালারা গ্রামের সমীর ঘোষও আমের দাম না থাকায় চিন্তিত। তিনি বিঘে চারেক জমিতে আম চাষ করেন। মগরার ঈশ্বরবাগের এক ব্যক্তি তাঁর কয়েক বিঘে জমি লিজে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রচুর আম হয়েছে এ বার। দাম নেই। এমন অবস্থা, যাঁকে লিজ দিয়েছি, তাঁর থেকে টাকা চাইতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE