শাসক দলের যুযুধান দুই গোষ্ঠীর প্রচার-পোস্টার।নিজস্ব চিত্র
দু’টো পোস্টারেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। দু’টোতেই ‘বন্দেমাতরম’, তৃণমূল আর ঘাসফুল। দু’জায়গাতেই তৃণমূল মনোনীত বা সমর্থিত ছ’জন প্রার্থীকে জেতানোর আহ্বান। প্রার্থীদের নাম অবশ্য দু’জায়গায় দু’রকম। ভোটাররা ও অন্য বাসিন্দারা দোটানায়— কারা আসল?
উপলক্ষ, কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচন। আর তা নিয়েই লালগড়ের এক তল্লাট এখন তৃণমূলের এ হেন অন্তর্দ্বন্দ্বের সাক্ষী। যে সে তল্লাট নয়, লালগড়ের কাঁটাপাহাড়ি, যেখানে আট বছর আগে শুরু হয়েছিল লালগড় আন্দোলন। কাঁটাপাহাড়ি কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির ছ’জন সদস্যকে রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি বেছে নেওয়া হবে। তার আগেই দুই গোষ্ঠীর আকচা-আকচি চরমে পৌঁছেছে।
একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়, অন্যটির মাথায় তন্ময় রায়, যিনি দলের ব্লক যুব সভাপতি। একটি ব্যানারের নীচে লেখা, সেটি বনবিহারী রায় কর্তৃক প্রচারিত। অন্য ব্যানারে প্রচারকের জায়গায় তন্ময় রায়ের নাম। কয়েক বছর ধরেই এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব (তৃণমূলের দলীয় পরিভাষায়, ‘মাদার’ আর ‘যুব’র লড়াই) ওই এলাকায় পরিচিত। কিন্তু কখনও এই পর্যায়ে যায়নি বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। শনিবার কাঁটাপাহাড়ির বিভিন্ন জায়গায় তন্ময় রায়ের গোষ্ঠীর প্রার্থীদের নাম সম্বলিত পোস্টার-ব্যানার-ফ্লেক্স দেখে অবাক এলাকাবাসী। বনবিহারী রায়ের শিবির অবশ্য তাদের প্রার্থীদের নাম দিয়ে আগেই পোস্টার দিয়েছিল।
সিজুয়ার অশোক পাত্র, পাপুরিয়া গ্রামের বিদ্যুৎ পাল।, কাঁটাপাহাড়ির শঙ্কর ভুঁইদের প্রশ্ন, ‘‘দু’দলই বলছে তৃণমূল, আমরা কাদের ভোট দেব?’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, কাঁটাপাহাড়ি কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির তহবিল ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার। সাত-আটটি গ্রামের প্রায় ৭০০ জন কৃষক ওই সমিতির সদস্য। কৃষকদের জমি বন্ধক রেখে স্বল্প সুদে তাঁদের কৃষিঋণ দেয় ওই সমিতি। বাসিন্দাদের একাংশের মতে, সমবায় সমিতির ভোটে জেতার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি জড়িত বলে দু’টি গোষ্ঠীই সমবায় সমিতির দখল নিতে মরিয়া। বনবিহারী রায়ের শিবিরের পোস্টারে প্রার্থীদের ‘তৃণমূল মনোনীত ও সমর্থিত’ বলা হয়েছে। তন্ময় রায় গোষ্ঠীর ব্যানারে জেলার দুই শীর্ষনেতার ‘অনুমতিক্রমে’ প্রার্থীদের দাঁড় করানো হয়েছে বলে দাবি।
ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো বলেন, ‘‘কী করব? দুই শিবির কেউ কারও কথা শোনে না। ’’ বনবিহারী রায়ের বক্তব্য, ‘‘চূড়ামণিবাবুর সঙ্গে কথা বলেই প্রার্থী দিয়েছিলাম। ছ’জনের মধ্যে যুব-র দু’জনও ছিলেন। কিন্তু ওরা এই ভাবে প্রার্থী দাঁড় করাল!’’ তন্ময় রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘‘এখন একটা প্রোগ্রামে ব্যস্ত আছি’’ বলে ফোন কেটে দেন।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী অবশ্য বলেন, ‘‘বিস্তারিত জানি না। তবে বলতে পারি, দলে একটাই প্যানেল থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy