চার্জশিট দেওয়ার মুখে খাগড়াগড় মামলার আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
শনিবার বিকেলে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র অফিসাররা শিয়ালদহ সংলগ্ন এলাকা থেকে আবদুল ওয়াহাব মোমিন ওরফে ওয়াহাব নামে বছর চৌত্রিশের ওই যুবককে পাকড়াও করেন। তার বাড়ি মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জ এলাকার নামো চাচন্ড। তবে দীর্ঘ দিন ধরে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। প্রসঙ্গত, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ২ অক্টোবর একটি বিস্ফোরণে দু’জন নিহত হওয়ার সূত্রে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে একটি জেহাদি জঙ্গি চক্রের কাজকর্ম বেআব্রু হয়ে পড়ে, যে চক্রের অগ্রভাগে রয়েছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
এনআইএ জানিয়েছে, ওয়াহাব এক জন প্রশিক্ষিত জেএমবি জঙ্গি। বাংলাদেশের জেএমবি নেতা তরিকুল ইসলাম ও হাতকাটা নাসিরুল্লা-সহ বেশ কয়েক জন জঙ্গিকে এ রাজ্যে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিল সে। তার বাড়িতেই জেএমবি জঙ্গিরা বেশ কয়েক বার গোপন বৈঠকে বসেছিল। এ রাজ্যের তরুণদের জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগের দায়িত্বেও ছিল ওয়াহাব।
ওয়াহাবকে নিয়ে খাগড়াগড়-কাণ্ডে এ যাবৎ ধরা হল ১৮ জনকে, যাদের মধ্যে চার জন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। তবে কলকাতা থেকে এই প্রথম কেউ ধরা পড়ল। এনআইএ সূত্রে খবর, তদন্তকারীরা ৩১ মার্চের মধ্যে খাগড়াগড়-কাণ্ডে চার্জশিট দিতে চেষ্টা করছেন। খাগড়াগড় মামলায় আরও ১৫ অভিযুক্তের খোঁজ করছে এনআইএ। আজ, রবিবার ওয়াহাবকে আদালতে হাজির করানোর কথা।
গোয়েন্দারা জানান, জেএমবি-র গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কম্যান ছিল এই ওয়াহাব। বাংলাদেশ থেকে এ পারে আসা জঙ্গি চাঁইদের থাকার বন্দোবস্ত ছাড়াও তাদের জন্য সিমকার্ড-সহ মোবাইল ফোন জোগাড়, গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আদান-প্রদান ও বোমা মজুত রাখার মতো কাজে সমন্বয়ের কাজ করত সে। এনআইএ-র এক শীর্ষকর্তা বলেন, “খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের অব্যবহিত পরে ওয়াহাবই জঙ্গি চক্রের কয়েক জন চাঁইয়ের জন্য মুর্শিদাবাদে নিরাপদ আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করেছিল। তার মোবাইল ব্যবহার করেই জেএমবি-র মাথারা মুর্শিদাবাদ থেকে বাংলাদেশে কথা বলেছিল।” ওই অফিসারের বক্তব্য, নামো চাচন্ডে জাতীয় সড়কের পাশে ওয়াহাবের বাড়ি বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে। তার বাড়িকে জেএমবি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করত।
এনআইএ জানায়, ওয়াহাব পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র মাথা হাতকাটা নাসিরুল্লা ওরফে সুহেলের অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন। জেএমবি-র আর এক চাঁই তালহা শেখের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল তার। নাসিরুল্লা ও তালহার হদিস পেতে এনআইএ ১০ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছে। ওয়াহাবের জন্য এনআইএ-র ঘোষিত পুরস্কার ছিল না। তবে গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ওয়াহাব যে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত, তা বিস্ফোরণের এক সপ্তাহ পরেই জানা গিয়েছিল। সেই থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল সে। তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে এনআইএ তার বাড়িতে একাধিক বার হানা দিলেও তাকে ধরা যায়নি।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওয়াহাবের দুই কন্যা বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদ্রাসায় পড়ত। এনআইএ-র দাবি, শিমুলিয়া মাদ্রাসা ছিল পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র জঙ্গি প্রশিক্ষণের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি। তদন্তকারীদের দাবি, ওয়াহাব নিজে সেখানে তালিম নিয়েছে বলে জেরায় স্বীকার করেছে। গোয়েন্দারা আগেই জেনেছেন, শিমুলিয়া মাদ্রাসা ইউসুফ শেখই চালাত। এনআইএ-র সন্দেহ, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর ইউসুফ, কওসর, হাতকাটা নাসিরুল্লা, তালহার মতো জঙ্গি চাঁইরা কিছু দিন মুর্শিদাবাদের গোপন ডেরায় লুকিয়েছিল, যার ব্যবস্থা করেছিল ওয়াহাবই। এনআইএ জেনেছে, ওয়াহাব খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশি শাকিল আহমেদেরও ঘনিষ্ঠ ছিল। তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, নামো চাচন্ডে ওয়াহাবের পরিচয় সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব ইন্ডিয়া (এসডিপিআই)-র এক সক্রিয় কর্মী হিসেবে। ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই দলের হয়ে প্রচারে সে বড় ভূমিকা নিয়েছিল।
কিন্তু ওয়াহাব কেন কলকাতায় এসেছিল? এক তদন্তকারী বলেন, “ওয়াহাব পেশায় রাজমিস্ত্রি। ওই কাজ নিয়ে সে কলকাতা বা তার আশপাশে কোথাও যাওয়ার তালে ছিল। তার আগেই সে আমাদের জালে পড়ল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy