Advertisement
১৮ মে ২০২৪
উদ্ধার নিহতের ব্যাগ, টাকা

বিপুল-খুনের পুনর্নির্মাণ করাল পুলিশ

এক-আধটা নয়। বাঁকুড়ার ঠিকাদার বিপুল রায়চৌধুরীকে খুনে মূল অভিযুক্ত সরাফত আলি ব্যবহার করেছিল মোট ছ’টি নাম। মোবাইল ঘেঁটে ও জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে বলে জানাল পুলিশ।

বিপুল রায়চৌধুরী খুনে অভিযুক্ত সরাফত আলি। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে। ছবি: বিকাশ মশান।

বিপুল রায়চৌধুরী খুনে অভিযুক্ত সরাফত আলি। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে। ছবি: বিকাশ মশান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০৪:১৪
Share: Save:

এক-আধটা নয়। বাঁকুড়ার ঠিকাদার বিপুল রায়চৌধুরীকে খুনে মূল অভিযুক্ত সরাফত আলি ব্যবহার করেছিল মোট ছ’টি নাম। মোবাইল ঘেঁটে ও জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে বলে জানাল পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ধৃতদের দুর্গাপুরে নিয়ে গিয়ে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করায় বাঁকুড়ার পুলিশ। উদ্ধার হয় নিহত ঠিকাদারের ব্যাগ, টাকা। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সবরি রাজকুমার কে জানান, গতিপ্রকৃতি দেখে মনে করা হচ্ছে, টাকার জন্যই ওই ঠিকাদারকে খুন করা হয়েছে। তবে ধৃতদের আরও জেরা করা হবে।

গত ১৪ জুলাই কল্যাণীতে মামাতো বোনের বাড়ি থেকে একাই গাড়ি চালিয়ে ফেরার পথে দুর্গাপুর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান বাঁকুড়া শহরের প্রতাপবাগানের বাসিন্দা বিপুলবাবু। ১৫ তারিখ বিপুলবাবুর আধপোড়া দেহ উদ্ধার করে ধানবাদের রাজগঞ্জ থানার পুলিশ। তাঁকে খুনের ঘটনায় পুলিশ দুর্গাপুর থেকে শ্রাবণী মণ্ডল, সরাফত আলি ওরফে সুদর্শন প্রসাদ-সহ পাঁচ জনকে ধরে পুলিশ। বিপুলবাবুর ঘনিষ্ঠ সরাফতই তাঁকে খুনের মূল চক্রী বলে পুলিশের দাবি। শ্রাবণী ও সরাফত দুর্গাপুরে একটি স্পা-এর সঙ্গে যুক্ত। ওই স্পা-এর আড়ালে দু’জনে দেহব্যবসা চালাত বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। শুধু বিপুলবাবু নয়, পুলিশকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে তাঁকে খুনে অন্যতম অভিযুক্ত নিজেদেরই শাগরেদ উজ্জ্বল শেখ নামে এক যুবককেও সরাফতরা খুন করে বলে অভিযোগ। তারও আধপোড়া দেহ সরাফতরা ফেলে দেয় ধানবাদের অন্য এক এলাকায়।

বাঁকুড়ার (সদর) সার্কেল ইনস্পেক্টর উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সদর থানার আইসি রাজর্ষি দত্ত, গঙ্গাজলঘাটির ওসি দেবাশিস পান্ডার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ধৃতদের নিয়ে প্রথমে দুর্গাপুরের নব ওয়াড়িয়ায় পৌঁছয়। সেখানে একটি বাড়িতে ডলি মল্লিক নাম নিয়ে ভাড়া ছিল অন্যতম অভিযুক্ত শ্রাবণী মণ্ডল। তার সঙ্গে থাকত দীপ মল্লিক নামে এক জন। পুলিশ জানায়, সেই ভাড়া বাড়িতে একটি ছোট বাক্সে কয়েক হাজার টাকা ও খুনের সময় ব্যবহৃত জামাকাপড় উদ্ধার হয়েছে। পরে পুলিশ ধৃতদের নিয়ে যায় শহরে সিটি সেন্টারে বেঙ্গল অম্বুজা এলাকার স্পা সেন্টারে, যেখানে শ্রাবণী কাজ করত। স্পা-এর উপরের তলাতেই ১৪ তারিখ রাতে বিপুলবাবুকে মদে নেশার ওষুধ মিশিয়ে খুন করা হয় বলে পুলিশ ধৃতদের জেরা করে জেনেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, কী ভাবে বিপুলবাবুকে খুন করা হয়, খড়ের তৈরি পুতুল নিয়ে তা ধৃতদের দেখাতে বলা হয় দোতলার ঘরে। এর পরে পুলিশ যায় বেঙ্গল অম্বুজা এলাকায় সরাফত আলি ওরফে সুদর্শন প্রসাদের বাড়িতে। সেখান থেকে বিপুলবাবুর একটি ব্যাগ মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। ওই এলাকাতেই সরাফতের একটি আসবাব ও ইলেট্রনিক্স জিনিসপত্রের দোকান ছিল। সব শেষে সেখানে তল্লাশি চালানো হয়। ধৃতদের গাড়িতে বসিয়ে রেখেই তালা খুলে দোকানে ঢোকে পুলিশ। দোকানের প্রায় সব জিনিসই সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ভাড়ার চুক্তি-সহ নানা কাগজপত্র নেওয়া হয়। বাড়ির মালিক জানান, খুনের ঘটনায় সরাফতের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরে বকেয়া কয়েক মাসের ভাড়া আদায়ের জন্য উকিলের চিঠি পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের দাবি, বিপুলবাবুকে খুনের মূল চক্রী এই সরাফতই। বিভিন্ন সময়ে সরাফত সুদর্শন প্রসাদ ছাড়া আরও চারটি নাম ব্যবহার করেছিল— সুনীল মণ্ডল, আর কে সরকার, অমিত ও খোকন। অমিত নামটি যেমন ব্যবহার করেছিল ঘণ্টা দুয়েকের জন্য। কেন এতবার নাম ভাঁড়িয়েছে সরাফত, তা পুলিশ জানার চেষ্টা চালাচ্ছে।

নব ওয়াড়িয়ার বাড়িটিতে শ্রাবণীর সঙ্গে দীপ মল্লিক নামে কে ছিল, সে নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। সরাফত যে ওই নাম নিয়ে সেখানে ছিল না, সে ব্যাপারে পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত। এ দিন শ্রাবণীর সঙ্গে ধৃত যে চার জনকে পুলিশ নিয়ে এসেছিল, দীপ কি তাদের মধ্যে কেউ? নব ওয়াড়িয়ার বাড়িটির মালিক জয়দেব সেন বলেন, ‘‘ওদের মধ্যে তো তাকে দেখলাম না।’’ সার্কেল ইনস্পেক্টর উদয়বাবু শুধু বলেন, ‘‘এ দিন ঘটনার পুনর্নির্মাণ হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE