Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Road Accident

বাসন্তী হাইওয়েতে ‘জয়রাইড’, বিপদ ঘটার আগেই সতর্ক করেছিল পুলিশ

ঘটনার সময়ে মোটরবাইক দু’টির গতিবেগ ছিল কমপক্ষে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন তরুণের। এক জন এখনও এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন।

মর্মান্তিক: বাসন্তী হাইওয়েতে মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়া মোটরবাইক। নিজস্ব চিত্র

মর্মান্তিক: বাসন্তী হাইওয়েতে মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়া মোটরবাইক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫৪
Share: Save:

উধাও মোটরবাইকের নম্বর প্লেট! পুলিশের চোখ বা রাস্তার সিসি ক্যামেরাকে ফাঁকি দিতে এটাই ছিল কারসাজি। নম্বর প্লেটহীন এই সব মোটরবাইক নিয়েই গতির তুফান তুলে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে চলত ‘রেস’! কিছু দিন আগেই ব্যাপারটি নজরে আসে পুলিশের। এমন কাণ্ড ঘটান যাঁরা, তাঁদের ধাওয়া করে বাড়ি এসে সতর্কও করে যায় পুলিশ। কিন্তু প্রবণতা বদলায়নি।

মঙ্গলবার রাতে এমনই রেস ডেকে আনল মৃত্যু। নম্বর প্লেটহীন দু’টি মোটরবাইক সরাসরি ধাক্কা মারল বাসন্তী হাইওয়ে ধরে চলা লরির পিছনে। পুলিশের অনুমান, ঘটনার সময়ে মোটরবাইক দু’টির গতিবেগ ছিল কমপক্ষে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন তরুণের। এক জন এখনও এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশি নজরদারি নিয়ে। লালবাজারের পুলিশকর্তাদের দাবি, নজরদারিতে গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গিয়েছে, মৃত তিন যুবকের নাম প্রদীপ নস্কর, শুভদীপ লাহা এবং অচ্যুতানন্দ গাইন। প্রদীপ এবং অচ্যুতানন্দের বয়স ১৮ ও ১৯ বছর। শুভদীপ ও আহত যুবক রাকেশ দাসের বয়স ২৪। প্রদীপ, অচ্যুতানন্দ ও রাকেশের বাড়ি ভাঙড়ের বামনঘাটায়। শুভদীপের বাড়ি মহেশতলায়। পুলিশ জেনেছে, ছোট থেকেই মোটরবাইকের নেশা প্রদীপের। তাঁর বাবার মাছের ভেড়ি রয়েছে। সব ধরনের গাড়ি চালাতে পারতেন প্রদীপ। ছেলের আবদারে প্রদীপের বাবা মোটরবাইকটি কিনে দিয়েছিলেন। অচ্যুতানন্দ নরেন্দ্রপুরে একটি বেসরকারি কলেজে প্যারামেডিক্যালের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাবা-মা বানতলা চর্মনগরীতে কাজ করেন। রাকেশ এবং শুভদীপের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে।

পুলিশ জেনেছে, সুযোগ পেলেই ‘জয়রাইড’-এ বেরিয়ে পড়তেন প্রদীপ। গ্রামের অলিগলি রাস্তা চষে দুরন্ত গতিতে মোটরবাইক ছোটাতেন বাসন্তী হাইওয়ে ধরে। মঙ্গলবার রাতেও বন্ধু অচ্যুতানন্দকে নিয়ে নিজের মোটরবাইকে বেরিয়েছিলেন প্রদীপ। অন্য মোটরবাইকে রাকেশকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শুভদীপ। বামনঘাটা থেকে সায়েন্স সিটির দিকে তীব্র গতিতে যাচ্ছিল দু’টি মোটরবাইক। বগডোবা বিআইটি কলেজের কাছে লরির পিছনে দু’টি মোটরবাইকই ধাক্কা মারে। বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় রক্তের দাগ তখনও। জুতো এবং বাইকের ভাঙা অংশ ছড়িয়ে রয়েছে। ভিড় উৎসুক জনতার।

প্রদীপ, শুভদীপ এবং অচ্যুতানন্দের বাড়িতে স্বভাবতই শোকের ছায়া। অচ্যুতের সহপাঠী দীপ্তি রায় বলেন, ‘‘সবাইকে মাতিয়ে রাখার ছেলে ছিল অচ্যুৎ। বাইক নিয়ে বেরোনোর কথা হলেই রাজি হয়ে যেত।’’ রাকেশের বাড়ির লোক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এ দিকে, প্রদীপের বাবা বিশ্বজিৎ নস্কর ডেঙ্গি আক্রান্ত। বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে এখনও ছেলের মৃত্যুর কথা জানায়নি পরিবার। এক আত্মীয়ের মন্তব্য, ‘‘ছেলেকে ভালবেসে বাইকটা কিনে দিয়েছিল। আর সেই বাইকেই এমন অঘটন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident Death Basanti Highway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE