Advertisement
০২ মে ২০২৪

সিম কার্ড জালিয়াতি করে ব্যাঙ্ক থেকে উধাও ৪৮ হাজার টাকা

টাকা হাতাতে এত দিন গ্রাহককে ফোন করে ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ (ওটিপি) হাতিয়ে নিত জালিয়াতেরা। এ বার টাকা লুঠতে গিয়ে সিম জালিয়াতির অভিযোগও উঠছে বলে পুলিশের দাবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সল্টলেক শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৮
Share: Save:

টাকা হাতাতে এত দিন গ্রাহককে ফোন করে ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ (ওটিপি) হাতিয়ে নিত জালিয়াতেরা। এ বার টাকা লুঠতে গিয়ে সিম জালিয়াতির অভিযোগও উঠছে বলে পুলিশের দাবি।

সম্প্রতি বিধাননগর কমিশনারেটে এমন অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে, এখনও দুষ্কৃতীদের খোঁজ মেলেনি। তবে সিম জালিয়াতি হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুলিশ। তাদের মতে, এমন ঘটতে থাকলে জালিয়াতি রোখা আরও কঠিন হবে। তাই এ নিয়ে টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলে বিধাননগর পুলিশ সূত্রের দাবি।

পুলিশ জানায়, সম্প্রতি সল্টলেকের বিএল ব্লকের এক বাসিন্দাকে এক ব্যক্তি ফোন করে টেলিকম পরিষেবা সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দেন। তিনি জানান, সল্টলেকের ওই বাসিন্দার সিম কার্ডটি পুরনো হয়ে গিয়েছে। সেটি ‘আপগ্রেড’ না করা হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ‘আপগ্রেড’ করার জন্য একটি বহু সংখ্যার নম্বরও দেন ফোনের ও-পারে থাকা ওই ব্যক্তি। তা এসএমএস মারফত সংশ্লিষ্ট টেলিকম পরিষেবার গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে পাঠাতে নির্দেশ দেন তিনি। এসএমএসটি পাঠানোর পরেই সিম কার্ডটি বন্ধ হয়ে যায়। কোনও গোলমাল হয়েছে, এটা বুঝতে পেরে সল্টলেকের ওই বাসিন্দা টেলিকম পরিষেবা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ফের একই নম্বরে নতুন একটি সিম কার্ড চালু করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, নম্বর ফের চালু হতেই ওই ব্যক্তির মোবাইলে পরপর পাঁচটি মেসেজ ঢোকে। তাতে তিনি দেখেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৪৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের দাবি, এমন আরও দু’টি অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা।

পুলিশকর্তাদের দাবি, এত দিন ফোন করে ডেবিট বা ক্রেডি়ট কার্ডের নম্বর, অ্যাকাউন্ট নম্বর হাতাত দুষ্কৃতীরা। তার পর টাকা লেনদেনের সময় ব্যাঙ্ক থেকে গ্রাহকের মোবাইলে আসা ‘ওটিপি’-ও কথার ছলে জেনে নিত তারা। বার বার এমন ঘটনা সামনে আসায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। সতর্ক হয়েছে ব্যাঙ্কও। তা ছাড়া, ‘ওটিপি’-র মেয়াদ দু’-তিন মিনিটের বেশি থাকে না। তাই লেনদেনের ক্ষেত্রেও তাড়া থাকে। ‘‘তাই হাতে সময় পেতে এ বার সরাসরি সিম কার্ড জালিয়াতির পথে হাঁটছে দুষ্কৃতীরা’’, মন্তব্য এক পুলিশকর্তার।

বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, সল্টলেকের ওই ব্যক্তিকে ফোন করে দুষ্কৃতীরা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ডেবিট কার্ডের তথ্য আগেই জেনে নিয়েছিল। তার পর নিজেদের সময় ও সুবিধা মতো টাকা তুলে নিয়েছে তারা। সিম কার্ড জালিয়াতি করায় ‘ওটিপি’ পেতেও অসুবিধা হয়নি। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরী বলছেন, অনেক সময় নানা ‘অচেনা’ ওয়েবসাইট মারফত কম্পিউটারে ‘ট্রোজান’ (এক ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস) ঢুকিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। সেই কম্পিউটার থেকে নেট ব্যাঙ্কিং বা অনলাইনে কেনা-কাটা করলেও ভাইরাস মারফত অ্যাকাউন্ট বা কার্ডের গোপন তথ্য জালিয়াতদের হাতে চলে যেতে পারে। সল্টলেকের ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

প্রশ্ন উঠেছে, নম্বর একই রেখে জালিয়াতি করার জন্য দুষ্কৃতীরা সিম কার্ড পেল কী ভাবে? পুলিশ সূত্রের দাবি, অনেক সময়ই টেলিকম সংস্থাগুলি এজেন্ট মারফত ‘আপগ্রেড’ করার বিশেষ সিম গ্রাহকদের দেয়। সেই সব এজেন্টদের হাত থেকে সিম জালিয়াতদের কাছে যেতে পারে। এই ঘটনায় তেমন কোনও চক্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

এই পরিস্থিতিতে পুলিশের পরামর্শ: ‘আপগ্রেড’ করার জন্য নতুন একটি সিমকার্ড সেই গ্রাহকের হাতে থাকতে হবে। শুধু নম্বর দিয়ে টেলিকম পরিষেবা সংস্থা সিম ‘আপগ্রেড’ করতে পারে না। এমন কোনও ফোন এলে তাকে আমল না দিতেই বলছেন পুলিশকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SIM Card Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE