গত কয়েক দিন ধরেই খবরটা পড়ছিলাম। বুধবার জানতে পারলাম, আদালতের নির্দেশে ভ্রূণাবস্থায় ধরা পড়া জটিলতা নিয়েই জন্মাতে বাধ্য হবে ওই শিশু। শুধু ডাউন সিন্ড্রোমই নয়, হার্ট, পেট-সহ বিভিন্ন অঙ্গেও সমস্যা রয়েছে গর্ভস্থ ওই শিশুর। ডাউন সিন্ড্রোম বা যে কোনও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর ক্ষেত্রে জরুরি হল প্রশিক্ষণ। যত দিন যাবে, ততই শিশুটির বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সমস্যা দেখা দেবে। সেই সব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে। কিন্তু ওই পরিবারের পক্ষে যে তা সম্ভব নয়, তা তো বলেইছেন সেই মহিলা। এই বিষয়গুলো যে কতটা খরচসাধ্য এবং পরিশ্রমের, তা শুধু জানে সেই পরিবারগুলি।
প্রাথমিক ভাবে ওই শিশুটির জন্মের প্রথম এক মাসের মধ্যেই কয়েকটি অস্ত্রোপচার করা জরুরি। যার খরচ প্রায় দশ লক্ষ টাকা। এর পরে তার চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণের জন্য মাসিক কুড়ি হাজার টাকা লাগবে। যত বড় হবে, তত বাড়বে সেই খরচ। এই মুহূর্তে এক জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের উপযুক্ত চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণের জন্য মাসে অন্তত তিরিশ হাজার টাকা তো লাগবেই!
এসএসকেএমের দুই চিকিৎসক আদালতকে জানিয়েছেন, শিশুটি ঠিক মতো জন্মালে ডাউন সিন্ড্রোম সত্ত্বেও তার বেঁচে থাকা সম্ভব। আমার প্রশ্ন, কোনও মতে বেঁচে থাকাটাই কি সব? অথচ, ১৯৭১ সালে যখন মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি আইন ভারতে চালু হয়, তখন পাশ্চাত্যের অনেক দেশও ওই আইন বলবৎ করার কথা ভাবেনি। এ ক্ষেত্রেও এমন কিছু উদাহরণ তৈরির কথা ভাবা যেতে পারত। এখন বলা হচ্ছে, গর্ভস্থ ভ্রূণের দেহে প্রাণ এসে গিয়েছে, শরীরের গঠন পূর্ণ হয়ে এসেছে। আমার প্রশ্ন, শিশুর হৃদ্স্পন্দন তো শোনা যায় পাঁচ সপ্তাহেই। তবে কী ভাবে ২০ সপ্তাহে গর্ভপাত হতে পারে? ১২ সপ্তাহেই তার শরীরের সব অঙ্গ স্পষ্ট হয়ে যায়। এর পরে শুধু বেড়ে ওঠার পালা। তবে কোন যুক্তিতে ২০ সপ্তাহ পার পেয়ে যাবে? শুধু আইনে আছে বলেই?
চিকিৎসকদের মতামতের উপরে ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কি আরও সংবেদনশীল হওয়া যেত না? আমার উত্তর, হ্যাঁ। সে ক্ষেত্রে ওই মহিলার জায়গায়
নিজেকে ভাবলেই বেরিয়ে আসত সেই উত্তর। কেউ কি ভেবেছেন, বাকি কয়েকটি সপ্তাহ কী চরম উদ্বেগ আর টানাপড়েন নিয়ে ওই মহিলা শিশুটিকে বহন করবেন? আর্থিক সমস্যা নিয়ে ওই শিশুর পরিবার কী ভাবে তার পরিচর্যা করবে? সেটা সমাজ কেন ভাববে না? এ ক্ষেত্রে তবে রাষ্ট্র দায়িত্ব নিক শিশুটির যাবতীয় খরচের।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy