Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Medical College and Hospital

টানাটানির নীলরতন থেকে চিকিৎসক আনা হল কলকাতা মেডিক্যালে

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক জন শিক্ষক-চিকিৎসককে সম্প্রতি এসএসকেএমে বদলি করা হয়েছে। তাতে কলকাতা মেডিক্যালের নেফ্রোলজি বিভাগ চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়ায় তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।

A Photograph of Kolkata Medical College and Hospital

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫১
Share: Save:

অন্যের শূন্যস্থান পূরণ করতে গিয়ে নিজের ঘরই শূন্য হওয়ার জোগাড়!

হাতে গোনা কয়েক জন চিকিৎসককে নিয়ে টেনেটুনে চলছিল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগ। সেখান থেকে এক সিনিয়র রেসিডেন্টকে বদলি করা হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। যার জেরে নীলরতনের ওই বিভাগে চিকিৎসকের সংখ্যা আরও তলানিতে। বৃহস্পতিবার হাওড়ার প্রশাসনিক সভা থেকেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, জেলার প্রান্তিক স্তরে উন্নত চিকিৎসা পৌঁছে দিতে মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাঝেমধ্যে সেখানে পাঠাতে হবে। কিন্তু শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলির বিভিন্ন বিভাগই যখন চিকিৎসকের অভাবে ‘রুগ্‌ণ’, তখন জেলায় ‘দুয়ারে ডাক্তার’ মিলবে কোথা থেকে?

স্বাস্থ্য প্রশাসনের কোনও মহলেই এর সদুত্তর মেলেনি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক জন শিক্ষক-চিকিৎসককে সম্প্রতি এসএসকেএমে বদলি করা হয়েছে। তাতে কলকাতা মেডিক্যালের নেফ্রোলজি বিভাগ চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়ায় তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার এনআরএস এবং এসএসকেএম থেকে এক জন করে সিনিয়র রেসিডেন্টকে কলকাতা মেডিক্যালে নিয়োগ করা হয়েছে। তাতেই এ বার এনআরএসের নেফ্রোলজি বিভাগে চিকিৎসক সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এক শূন্যস্থান পূরণ করতে গিয়ে আর একটি চালু জায়গা যে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, তা কেন স্বাস্থ্য ভবনের নজরে থাকবে না? যদিও এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সদুত্তর মেলেনি। বরং দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘কলকাতা মেডিক্যালের নেফ্রোলজি তো একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। সেখানে এনআরএসে কয়েক জন চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁদেরই এক জনকে তুলে আনা হয়েছে। এনআরএসের বিষয়টিও নজরে এসেছে।’’

আসলে পুরো ব্যবস্থাটাই ‘ঠেকনা’ দেওয়ার মাধ্যমে চলছে বলে অভিযোগ চিকিৎসক মহলের একাংশের। তাঁরা জানাচ্ছেন, এনআরএসে নেফ্রোলজির ‘ডিএম’ কোর্স পড়ানো হয়। ২০ শয্যার অন্তর্বিভাগ রোজই রোগীতে ভর্তি থাকে। এ ছাড়াও, জরুরি অবস্থায় আসা কিডনি রোগীদের জন্য অ্যাকিউট কিডনি ইউনিট, কিডনি প্রতিস্থাপন এইচডিইউ এবং ২৪ ঘণ্টার ডায়ালিসিস পরিষেবা চালু রয়েছে। পাশাপাশি, অন্যান্য বিভাগ থেকে ‘রেফার নোট’ দিয়ে পাঠানো ২০-৩০ জন রোগীকেও প্রতিদিন দেখতে হয়। সপ্তাহে দু’দিন বহির্বিভাগ, কিডনি প্রতিস্থাপন, ডায়ালিসিস ক্লিনিকও চলে। গত এক বছরে ১০টি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে ওই হাসপাতালে। তা সত্ত্বেও এক জন চিকিৎসককে তুলে নেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত?

সূত্রের খবর, ওই মেডিক্যাল কলেজের নেফ্রোলজিতে শিক্ষক-চিকিৎসক দু’জন। এক জন বিভাগীয় প্রধান, অন্য জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর চাকরি ছাড়ায় সেই পদ ফাঁকা। কয়েক মাসের মধ্যেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি) সেখানে পরিদর্শনে আসবে। নিয়মানুযায়ী, নেফ্রোলজিতে অন্তত তিন জন শিক্ষক-চিকিৎসক থাকার কথা। অন্য এক হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পরিদর্শনের আগে দেখা যাবে, অন্য কোনও মেডিক্যাল কলেজ থেকে এক জনকে এনআরএসে বদলি করা হচ্ছে। কাজ মিটতেই তিনি ফিরে যাবেন। কুমিরছানা দেখানোর মতো করে পরীক্ষায় পাশ করবে ওই মেডিক্যাল কলেজও।’’ জানা যাচ্ছে, এনআরএসের নেফ্রোলজিতে তিন জন এসআর-এর থাকার কথা থাকলেও, পাশ করার পরে এক জন চিকিৎসক কাজেই যোগ দেননি। তাই ছিলেন মাত্র দু’জন। সেখান থেকেও কমে গেলেন এক জন।

সব মিলিয়ে এনআরএসের নেফ্রোলজিতে এখন চিকিৎসকের মোট সংখ্যা মাত্র তিন। যাঁদের উপরে পঠনপাঠন থেকে অস্ত্রোপচার, সবটাই নির্ভর করছে। এই অবস্থায় রোগীর পরিজনদের সংশয়, সেখানে কলকাতা মেডিক্যালের পুনরাবৃত্তি হবে না তো?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE