—প্রতীকী চিত্র।
দিনকয়েক আগের ঘটনা। বিজ্ঞানের প্রয়োগ হাতেকলমে বুঝতে উৎসাহ নিয়ে মঞ্চে উঠেছিল দশম শ্রেণির ছাত্র, অটিস্টিক অনির্বাণ গুহ (নাম পরিবর্তিত)। আর তার পরেই ঘটে বিপত্তি।
‘বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজ়িয়াম’ (বিআইটিএম)-এর ওই বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে আকস্মিক বিদ্যুতের ঝটকায় শারীরিক অস্বস্তি শুরু হয় অনির্বাণের। মঞ্চ থেকে ছুটে নেমে এসে মাকে সে বলতে থাকে, ‘‘আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে। এই শো-টা আর কোনও দিন দেখব না। এখনই এখান থেকে চলো।’’
ঘটনার আকস্মিকতায় বিপাকে পড়েন অনির্বাণের মা অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু অস্বস্তি বাড়তে থাকে অনির্বাণের। সে বিভিন্ন ভাবে আহত করে নিজেকে, মা-কেও। সেই যাত্রায় কোনও মতে ছেলেকে সামলে বাড়ি ফিরে যান অদিতি। কিন্তু সেই ধাক্কায় এখনও ভোগান্তি চলছে মা-ছেলের। বর্তমানে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত অনির্বাণ।
পেশায় চিকিৎসক অদিতি বলেন, ‘‘ওই প্রদর্শনীতে ছেলের যে বিদ্যুতের শক লাগতে পারে, সে বিষয়ে আমার কোনও ধারণাই ছিল না। আগাম একটুও আঁচ পেলে ছেলেকে ওখানে যেতে দিতাম না।’’ তাঁর আক্ষেপ, সে দিন প্রদর্শন শুরুর আগে এক বারও বিদ্যুতের বিষয়টি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের তরফে দর্শকদের সতর্ক করা হয়নি। অন্তত প্রেক্ষাগৃহের বাইরে লিখিত বিজ্ঞপ্তি থাকলেও তাঁরা সতর্ক হতেন। তা-ও ছিল না।
শুক্রবার গোটা বিষয়টি জানার পরে বিআইটিএম-এর অধিকর্তা শুভব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এমনটা যাতে ভবিষ্যতে কখনও না ঘটে, সে ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকব।’’ তাঁর দাবি, এই প্রদর্শন বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। এমন প্রদর্শনের আগে স্বেচ্ছাসেবকেরা সাধারণত দর্শকদের আগে থেকেই সতর্ক করে দেন। হয়তো ওই দিনও মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হয়েছিল, তখন ওই কিশোরের মা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আগে তাঁরা এ রকম অভিযোগ কখনও পাননি বলেও দাবি করেন তিনি। ওই দিন ঠিক কী হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন অধিকর্তা।
এসএসকেএম হাসপাতালের শিক্ষক-চিকিৎসক অদিতি জানান, বিকেল সাড়ে চারটের ‘হাই-ভোল্টেজ শো’ দেখতে গিয়ে ওই বিপত্তি ঘটে। বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখাতে দর্শকাসন থেকে পডুয়াদের এক জনকে মঞ্চে যেতে বলেন মডারেটর। উৎসাহী অনির্বাণ গিয়ে মঞ্চে রাখা চাকার সামনে দু’টি ‘ইলেক্ট্রোড’-এ হাতের আঙুল ছোঁয়াতেই বিদ্যুতের শক লাগে। বৈদ্যুতিক উদ্দীপকের প্রভাবে শারীরিক সমস্যা শুরু হয় অনির্বাণের। অটিজ়ম আছে, এমন অনেকের জোরে আওয়াজ বা তীব্র আলোর মতো এই ধরনের বৈদ্যুতিক উদ্দীপনাতেও ‘সেন্সরি’ সমস্যা হয়।
অদিতি জানান, প্রতিদিনই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বিআইটিএম-এ যায় বিজ্ঞানের জটিল বিষয় সহজে বুঝে নিতে। তাদের মধ্যে বিশেষ ভাবে সক্ষম বহু পড়ুয়াও থাকে। সকলের পক্ষে আগে থেকে জানা সম্ভব নয়, সে দিন সেখানে কী ঘটতে চলেছে। সে ক্ষেত্রে প্রদর্শন করছেন যাঁরা, তাঁদের তরফে পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের বিষয়টি আগাম জানিয়ে দেওয়া হলে বা লিখিত সতর্কবার্তা দেওয়া থাকলে এই ধরনের বিপত্তি এড়ানো যায়। ‘সায়েন্স সিটি’র টাইম মেশিন প্রেক্ষাগৃহের বাইরেই যেমন হৃদ্রোগী, স্নায়ুরোগী এবং প্রসূতিদের জন্য লিখিত সতর্কবার্তা দেওয়া আছে।
অদিতি বলেন, ‘‘আমার ছেলের জায়গায় প্রসূতি বা হার্টে পেসমেকার বসানো কেউ যোগ দিলে তো ফল আরও মারাত্মক হতে পারত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy