জোরে হাওয়া দিলেই প্ল্যাটফর্মের ধারে নড়বড়ে ঝুপড়িতে দুলে ওঠে ছেঁড়াফাটা কাপড়ের পর্দা।
আর মাকে আঁকড়ে ধরে কেঁপে ওঠে দশ বছরের ছেলেটা। গলা, বুক, পিঠ, হাত বেয়ে নেমে আসা অ্যাসিডের দগদগে ঘা অনেকটাই শুকিয়েছে। তবু আট মাস আগের দুপুরের হামলার ক্ষত সুরজিৎ কামালের মন থেকে মোছেনি।
‘‘সত্যি বলতে, আমারও ভয় করে খুব! এ ঘরের দরজা বন্ধ করার জো নেই। কে জানে, জেল থেকে বেরিয়ে পাজি লোকটা যদি আবার আসে,’’ থমথমে স্বরে বলেন সুরজিতের মা গীতা। বিরাটি স্টেশনের ধারে অ্যাসিড আক্রান্ত মা-ছেলের বৃত্তান্ত আনন্দবাজারে প্রকাশের পরে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু সাহায্য মিলেছে। তবে নিরাপত্তাহীনতার ছবিটা পাল্টায়নি একটুও। অগস্টের দুপুরে স্টেশনের ধারে হামলাকারীর ছোড়া অ্যাসিডে মা-ছেলের দুরবস্থা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কার্যত টনক নড়েনি প্রশাসনের।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অ্যাসিড-হামলার ১৫ দিনের মধ্যেই আহতদের ন্যূনতম তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। গীতা-সুরজিতের ভাগ্যে কেন জুটল না তা?
‘‘আমরা তো সব স্বরাষ্ট্র দফতরে লিখে পাঠিয়েছি,’’ বলছেন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির মাধ্যমে আদালতে না-গেলে মুশকিল আসানের আশা নেই। আরও অনেক অ্যাসিড-আক্রান্তের মতো তাই শিকে ছেঁড়েনি বিরাটির মা-ছেলের কপালে।
২৬ বছরের তরুণী বধূ গীতাকে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগে ধৃত পল্টু কর্মকার নামে মাঝবয়সি লোকটির বিরুদ্ধে অবশ্য চার্জশিট পেশ করেছে পুলিশ। কিন্তু সেই অভিযুক্ত জামিন পেয়ে বেরোলে কী হবে, তা ভেবেই ঘুম নেই মা-ছেলের। অ্যাসিডে জখম হওয়ার দিন কয়েক আগেও পল্টু এক বার অ্যাসিড ছুড়েছিল বলে অভিযোগ গীতার। লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় সে-বার ঘরের কিছু জামাকাপড় শুধু পুড়ে যায়। ‘‘পুলিশকে জানালেও ওরা একদম গা করেনি। তখন পুলিশ যদি ওকে ধরত, তা হলে আমরা রেহাই পেতাম,’’ বারবার বলছেন গীতা।
গীতার স্বামী মন্টু রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। গোটা চৈত্র কাজের অভাবে নাজেহাল। অ্যাসিডে জখম ছোট ছেলে সুরজিৎ আর তার পিঠোপিঠি দাদা শুভদীপকে নিয়ে জোড়াতালির সংসার। মা ও ভাই হাসপাতালে থাকার সময়ে শুভদীপ কিছু দিন ট্রেনে ভিক্ষে করতে বাধ্য হয়েছিল। এখন সে ফের স্কুলে যাচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া সুরজিৎ এখনও স্কুলে যেতে পারছে না। তাকে পড়াচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ‘পিসি-মাসিরা’। ক্ষত সারাতে ছেলেটার গলার কাছে অস্ত্রোপচার এখনও বাকি। তাড়া করে বেড়াচ্ছে স্টেশনের খোলা ঝুপড়িতে জীবনযাপনের আতঙ্কও।
‘‘কী করে যে ছেলেটাকে স্বস্তি দেব, ভেবে ভেবে কোনও কূলকিনারা পাই না,’’ গীতার গলায় দুর্ভাবনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy