আচ্ছন্ন: রেললাইনের উপরেই চলছে বাজি পোড়ানো। ধোঁয়ায় ঢেকেছে চারপাশ। রবিবার, বিদ্যাধরপুরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
গত দু’দিন বৃষ্টির সৌজন্যে ভাল ছিল বাতাসের মান। কিন্তু কালীপুজোর দিনে দূষণের নিরিখে ফের ‘খারাপ’ মানে ফিরে গেল কলকাতা। যেখানে বাতাসের ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ সহনশীল মাত্রার থেকে প্রায় ১১ গুণ বেশি হল! রাতে বাজির ধোঁয়ায় কুয়াশার মতো চাদরে ঢাকা পড়ে যায় কলকাতা।
পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা, বাতাসের মান আরও খারাপ হবে ফলে দ্রুত শহর ছুঁয়ে ফেলবে দিল্লিকে। কারণ, বাজি ফাটার ফলে কালীপুজোর রাত থেকেই বাতাসের মানের অবনমন শুরু হয়, যা চলে বিসর্জন পর্যন্ত। একেই ঠান্ডা আবহাওয়ায় দূষণের মাত্রা বেশি থাকে, সে ক্ষেত্রে বাজি অনুঘটকের কাজ করে। তড়তড়িয়ে বাড়তে থাকে দূষণের রেখচিত্র।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, শনিবার দিল্লির বায়ুসূচকের মান ছিল ‘খারাপ’। সেখানে কলকাতায় বায়ুসূচক ছিল ‘সন্তোষজনক’। শহরের রবীন্দ্রভারতী, রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-সহ সব জায়গায় বাতাসের মান ছিল সন্তোষজনক। পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয় রবিবার। দিল্লি এবং কলকাতা, দু’জায়গাতেই। দিল্লিতে অবশ্য এমন হওয়াটা প্রত্যাশিতই ছিল বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীদের একটি অংশ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, এ দিন দিল্লির বায়ুসূচকের মান ছিল ‘খুব খারাপ’, অর্থাৎ স্বাস্থ্যের পক্ষে যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কলকাতায় সেখানে রবিবার দুপুর পর্যন্ত বায়ুসূচকের মান ছিল ‘মাঝারি’। ‘ভাল’, ‘সন্তোষজনক’ থেকে এক ঝটকায় বাতাসের ‘মাঝারি’ মান হওয়ার পিছনে তখনই পরিবেশকর্মীরা সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন। তাঁদের আশঙ্কা সত্যি হয় রাতে। বাজি ফাটার ফলে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর-সহ একাধিক এলাকার বাতাসের মান খারাপ হতে থাকে।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, শনিবার রাত ১১টায় বি টি রোডের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেখানে রাত ১১টায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ১৩৮.৫ মাইক্রোগ্রাম ছিল, সেখানে রবিবার ভোর ৩টেয় বাতাসে ভাসমান পরিমাণ হয়েছিল প্রতি ঘনমিটারে ২২৩.৪ মাইক্রোগ্রাম। রাত ন’টাতেই সেই পরিমাণ দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটারে ৪৪০.৬ মাইক্রোগ্রাম ও রাত দশটায় তার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটারে ১১৩২.৫ মাইক্রোগ্রাম, যা সহনশীল মাত্রার ১১ গুণ বেশি। রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় রাত দশটায় ওই পরিমাণ হয় ৭২৫.১৩ মাইক্রোগ্রাম। পিএম-১০-এর সহনশীল মাত্রা হল প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, গত কালীপুজোর রাত ১২টায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ সহনশীল মাত্রার সাত গুণ বেশি হয়েছিল! সে দিন ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭২০.৪১ মাইক্রোগ্রাম। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের বক্তব্য, বাজি ফাটালে বাতাসে মূলত পিএম-১০-এর মাত্রাই অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাজি ফাটানোয় বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড-সহ একাধিক দূষক মিশে যায়। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ বিপজ্জনক। শুধু অন্যদের জন্যই নয়, যাঁরা বাজি ফাটান, তাঁদেরও কিন্তু এর ফলে ক্ষতি হয়।’’ বক্ষরোগ চিকিৎসক রাজা ধর বলছেন, ‘‘যাঁদের হাঁপানি নেই, তাঁদের এ সময়ে নতুন করে হাঁপানি হতে পারে। এই সময়টায় অনেক শিশু হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়।’’ এক
পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘কালীপুজো, দীপাবলির হাত ধরে যে দূষণটা শুরু হয়, তার রেশ বেশ কয়েক দিন থাকে। এর মধ্যে আবার ঠান্ডা পড়তে শুরু করে দেয়। ফলে দূষণের মরসুমও পুরোমাত্রায় শুরু হয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy