Advertisement
২১ মে ২০২৪

জমি-সংঘর্ষে জড়ালেন ২ কাউন্সিলর

সিন্ডিকেট, তোলাবাজির অভিযোগে দলের কাউন্সিলর বা নেতাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কড়া অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যেই এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী দুই দুষ্কৃতীর সঙ্গে দলের দুই কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগ উঠল হাওড়ায়।

মেয়ের সঙ্গে প্রহৃত মেহেদি হাসান। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

মেয়ের সঙ্গে প্রহৃত মেহেদি হাসান। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

সিন্ডিকেট, তোলাবাজির অভিযোগে দলের কাউন্সিলর বা নেতাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কড়া অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যেই এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী দুই দুষ্কৃতীর সঙ্গে দলের দুই কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগ উঠল হাওড়ায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকায় দখলদারি নিয়ে দুই দুষ্কৃতীর দলের দীর্ঘদিনের বিবাদ। দু’একবার তার জেরে গুলি-বোমাবাজির ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাওড়ার মালিপাঁচঘরা থানার গুহ রোডের বাসিন্দা ফিরোজ হাসান ও শাকিল আহমেদ নামে ওই দুই দুষ্কৃতীকেই গত পুরভোটে সক্রিয় ভাবে দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের হয়ে কাজ করতে দেখা গিয়েছে। দু’জনেই শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। অথচ দু’জনের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছে। অভিযোগ, রবিবার এক দুষ্কৃতীর বাড়িতে সশস্ত্র হামলা ও মহিলাদের মারধরের ঘটনার পরে বিরুদ্ধ গোষ্ঠী প্রকাশ্যে ৭-৮ রাউন্ড গুলি চালিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ায়। এর পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। ঘটনাস্থলে ছুটে যান পদস্থ পুলিশ কর্তারা। গ্রেফতার করা হয়
এক জনকে।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনের আগে ফিরোজকে ৬০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত সীমা ভৌমিকের হয়ে এবং সাকিলকে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর পল্টু বণিকের হয়ে কাজ করতে। অভিযোগ, ভোটে জেতার পর থেকেই দু’জনে দুই কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তার পর থেকেই এলাকা দখল ও প্রোমোটারি নিয়ে লড়াই বেধেছে দু’জনের। অভিযোগ অস্বীকার করে সীমাদেবী বলেন, ‘‘ফিরোজকে আমি চিনি না। দলে অনেকেই রয়েছে। কে কী করছে, তা জানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’

পল্টুবাবু অবশ্য শাকিলকে চেনার কথা মেনে নিয়েছেন। তবে সে যে দুষ্কর্মের সঙ্গে যুক্ত, তা জানতেন না বলে দাবি করেছেন তিনি। পল্টুবাবু বলেন, ‘‘শাকিল দলের হয়ে কাজ করে। আমার সঙ্গে থাকে। কিন্তু সে কোথায় কী অপরাধ করছে, তা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়।’’

পুলিশ জানায়, ফিরোজের বাবার নাম মেহেদি হাসান। তাঁরা যে বাড়িতে থাকেন, তা নির্মাণকালেই বহুতলের ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ নিয়ে প্রতিবেশী শাকিলের সঙ্গে গোলমাল বাধে। ফিরোজও সালকিয়ার দুষ্কৃতীদের নিয়ে পাল্টা দল গড়ে। শুরু হয় দুই গোষ্ঠীর এলাকা দখলের লড়াই। মাস চারেক আগে শাকিল দলবল নিয়ে ফিরোজের আবাসনে হামলা চালাতে আসে বলে অভিযোগ। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা এক হামলাকারীকে ধরে ফেলে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরে শাকিল কিছুটা দমে যায়। পুলিশ জানায়, সম্প্রতি ফিরোজের বাড়ির পাশে একটি ১২ কাঠা জমিতে প্রোমোটিং করা নিয়ে ফের গোলমাল বাধে। অভিযোগ, ফিরোজদের পরিবার তাতে বাধা দেওয়ায় দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক মাস ধরে ঠান্ডা লড়াই চলছিল। রবিবার তা-ই প্রকাশ্যে আসে।

কী হয়েছিল ওই দিন?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শাকিলের নেতৃত্বে রাত ১০টা নাগাদ ২০-২৫ জনের একটি দল রিভলভার, বাঁশ, লাঠি নিয়ে ফিরোজকে খুঁজতে আসে ওই বহুতলে। বাইরে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে সোজা দোতলায় উঠে গিয়ে ফিরোজকে না পেয়ে তার বাবা-সহ পরিবারের লোকজনকে মারধর করে। অভিযোগ, ফিরোজের বাবার গালে রিভলভারের বাঁট দিয়ে জোরে আঘাত করে তারা। এমনকী মহিলাদের গায়েও হাত দেওয়া হয়। রেহাই পাননি আশপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এবং শিশুরাও।

পুলিশ জানায়, এর আধ ঘণ্টার মধ্যে সালকিয়ার দিক থেকে মোটরবাইকে চার যুবক এসে গুহ রোডে ঢুকে এলোপাথাড়ি কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। গোটা ঘটনাটি ধরা পড়ে সিসিটিভির ক্যামেরায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, এলাকায় নিজের অস্তিত্ব জানান দিতেই সদলবলে এসে গুলি চালিয়ে সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টা করেছে ফিরোজ।

একটি এলাকায় পরপর এ ভাবে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের পরে স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা ও নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্নের মুখে এলাকাবাসীর নিরাপত্তাও। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্র প্রকাশ সিংহের অবশ্য দাবি, পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। ওই বহুতলে দুষ্কৃতী হামলার খবর পেয়েই পুলিশ পৌঁছে গিয়েছিল। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এটা এলাকার দুই দুষ্কৃতী দলের মধ্যে এলাকা দখলের গোলমাল। এর মধ্যে অন্য কিছু নেই। তল্লাশি শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই সকলকে গ্রেফতার করা হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘এই ধরনের লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করলে দল কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না। প্রমাণ পেলে কড়া ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

councillors local goon Land Syndicate Raj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE