রোজনামচা: আসা যাওয়ার পথে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
কখনও অভিজাত ঝাঁ-চকচকে, কখনও আবার বিবর্ণ ঘিঞ্জি। কোথাও পাড়ার রাস্তাটা বেশ চওড়া, কোথাও আবার এঁকেবেঁকে কিছুটা সঙ্কীর্ণ। নতুন পুরনো অসংখ্য বাড়ি, আকাশ ছোঁয়া বহুতল, ইতস্তত গজিয়ে ওঠা দোকান আর সম্পর্কের উষ্ণতা নিয়েই আমাদের দিন কাটে এ পাড়ায়। বেহালা অঞ্চলে জ্যোতিষ রায় রোড পাড়াটার চোহারায় তেমন আকর্ষণ না থাকলেও সেটা লুকিয়ে আছে এর দিন যাপনের মধ্যবিত্ত বাঙালি মেজাজটাতে।
টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড থেকে শুরু হয়ে পাড়াটা রায় বাহাদূর রোডে গিয়ে মিশেছে। দশ বছর আগে যখন এখানে এসেছিলাম তখন চারপাশটা অনেক ফাঁকা ছিল। দেখতে দেখতে বদলে গেল এলাকাটা।
এ পাড়ায় মূলত মধ্যবিত্ত মানুষের বসবাস। এক কথায় পাড়াটা শান্তিপূর্ণ। এখানকার মানুষ আন্তরিক, এবং অতিথিবৎসল। সুখ-দুঃখে পাশে থাকার অভ্যাসটা তাই আজও আছে। মনে পড়ছে আমার এক আত্মীয় দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকাকালীন পড়শিরা এসে খোঁজখবর নিতেন, প্রয়োজনে সাহায্যও করতেন। পরে তিনি যখন প্রয়াত হন, প্রতিবেশীরা সকলেই এগিয়ে এসে সাহায্য করেছিলেন। এখনও লোকবলের অভাবে কাউকে অসহায় বোধ করতে হয় না। এটা এ পাড়ার একটা বিশেষ গুণ। বাসিন্দাদের মধ্যে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও তার প্রভাব কখনওই পাড়ায় পড়ে না।
কমেছে খেলাধুলোর চলও। পাড়ার রাস্তাতেই বিকেলের দিকে ছোটরা মাঝেমধ্যে ক্রিকেট, ফুটবল খেলে। প্রতিদিনের খেলাধুলো এখন যেন বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বদলে গিয়েছে। কচিকাঁচারা এখন মাঠের পরিবর্তে বাড়িতে বসে ডেস্কটপে খেলতে ভালবাসে।
অন্যান্য পাড়ার মতো মিলছে নাগরিক পরিষেবা। দিনে দু’বার করে রাস্তা পরিষ্কার হওয়ায় পাড়াটা পরিচ্ছন্ন থাকছে। আলোকস্তম্ভে বসেছে জোরালো আলো। তবে পাড়াটা পরিচ্ছন্ন রাখতে এলাকার মানুষও উৎসাহী। এ পাড়ার আড্ডাটা আছে ঠিকই, তবে সেটা কিছুটা ক্লাব নির্ভর। একে একে রকগুলি হারিয়ে যাওয়ায় রকের আড্ডা আর চোখে পড়ে না। এখন আড্ডা বসে ক্লাবের ভিতরে, কখনও বা চেয়ার পেতে গলির মুখে। এ ব্যাপারে পাড়ার যুব সম্প্রদায় আগ্রহী।
এ পাড়ায় বাঙালিয়ানা এখনও অটুট। পয়লা বৈশাখে এখনও পাড়ার মোড়ে ধুতি-পাঞ্জাবি পরে অনেকেই আড্ডায় বসেন। এখনও ইস্টবেঙ্গল- মোহনবাগানের খেলা হলে এ পাড়ায় রীতিমতো উন্মাদনা দেখা যায়। খেলা নিয়ে ঘটি-বাঙালের ক্ষণিকের ঝগড়াঝাটি হলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার মিলমিশ হয়।
পাড়ার মূল রাস্তাটিতে চলছে সংস্কারের কাজ। এতে যাতায়াতের সুবিধে হবে। তবে রাস্তাটি খুব একটা চওড়া না হওয়ায় সেখানে গাড়ির পার্কিং সম্ভব নয়। গলির মুখে গাড়ির পার্কিং থাকায় অনেকেরই গাড়ি নিয়ে ঢুকতে বেরোতে সমস্যা হয়। আগে পাড়ার শেষ দিকটায় বেশ কিছু চালকল ছিল। কমে এসেছে পাড়ার গাছ-গাছালি। পাড়ার এক দিকে রয়েছে একটি ঝিল।
এ পাড়ায় বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকে। উৎসবে সকলে মিলেমিশে যোগ দেন। পাড়ার বাজারটি ছোট, তবে পাওয়া যায় প্রয়োজনীয় সব কিছুই। এখানে আজও টিকে আছে ক্রেতা-বিক্রেতার আন্তরিক সম্পর্ক।
লেখক আইনজীবী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy