ফাইল ছবি
এক বার ভুল হতে পারে। দুই বা তিন বার হলেও না-হয় ভুল বলে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তা পর পর ছ’বার হলে সন্দেহ হওয়াই স্বাভাবিক।
গত তিন বছর ধরে কলকাতা বিমানবন্দরে সেই ভুলের শিকার উল্টোডাঙার বাসিন্দা সুবীর সাহা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে বার ছয়েক বিমানবন্দরে গিয়েছেন কাউকে না কাউকে তুলতে বা নামাতে। তাঁর অভিযোগ, প্রতি বারই তাঁর কাছ থেকে কার্যত জোর করে অতিরিক্ত পার্কিং ফি নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক বার তিনি ইমেল মারফত অভিযোগ জানিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। সব ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত সেই ৪০ টাকা পার্কিং ফি ফেরত পাঠানো হয়েছে তাঁকে।
বহুজাতিক সংস্থা থেকে অবসর নেওয়া সুবীরবাবুর দাবি, “প্রতিটি ক্ষেত্রেই জানানো হয়েছে, ভুল করে অতিরিক্ত পার্কিং ফি নেওয়া হয়েছে। আমার না হয় উদ্যোগ, উৎসাহ, সময় ছিল। তাই মেল করে টাকা ফেরত নিয়েছি। টাকার পরিমাণটা তো বড় কথা নয়। এখানে সততার প্রশ্নটা বড়।” তাঁর অভিযোগ, কয়েকশো মানুষ, যাঁরা প্রতিদিন কলকাতা বিমানবন্দরে গিয়ে পার্কিংয়ে গাড়ি রাখছেন, তাঁদের কাছ থেকেও নিশ্চয়ই একই ভাবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রতিদিন দুশোর মতো গাড়ি পার্কিংয়ে ঢুকে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে বেরিয়ে যায়। সেই সব গাড়ি থেকে যদি গড়ে ৪০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়, তা হলে দিনে বেআইনি ভাবে নেওয়া টাকার পরিমাণটা দাঁড়ায় আট হাজার টাকা। মাসে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা! পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা সংস্থার প্রধান বাবুলাল বলেন, “এ রকম হওয়ার কথা নয়। একটি-দু’টি ক্ষেত্রে হয়তো হয়ে থাকবে।”
নিয়ম অনুযায়ী, বিমানবন্দরে পার্কিংয়ে ঢোকার সময়েই ৪০ টাকা নেওয়া হয়। আধ ঘণ্টার মধ্যে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলে তার বেশি নেওয়া হয় না। কিন্তু আধ ঘণ্টার বেশি হলে মোট ১০০ টাকা নেওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে যে হেতু ইতিমধ্যেই ৪০ টাকা দেওয়া রয়েছে, তাই পার্কিং থেকে বেরোনোর সময়ে অতিরিক্ত ৬০ টাকা দেওয়ার কথা। দু’ঘণ্টা পর্যন্ত ওই ১০০ টাকা ফি-ই থাকার কথা।
সুবীরবাবুর দাবি, তিনি প্রতি বারই প্রায় এক ঘণ্টা পরে বেরিয়েছেন। আর যত বারই বেরিয়েছেন, তত বারই বাইরে তাঁকে ১০০ টাকা করে দিতে বলা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “আমি প্রতি বার বলেছি, ইতিমধ্যেই ৪০ টাকা দিয়েছি, তাই অতিরিক্ত ৬০ টাকাই নিন। তবু আমাকে বলা হয়েছে, ১০০ টাকাই দিতে হবে।”
তিনি সেখানে ১০০ টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরে ইমেলে অভিযোগ জানিয়ে ওই ৪০ টাকা ফেরত পেয়েছেন। তাঁর কথায়, “এটা জালিয়াতি ছাড়া আর কী বলব! আমি ইমেলে অভিযোগ করার সময়ে বলেছি, আপনারা এই ব্যবস্থাপনা বদলে ফেলুন। পার্কিংয়ে ঢোকার সময়ে ৪০ টাকা নেওয়া বন্ধ করুন। শপিং মলের মতোই ঢোকার মুখে শুধু সময় লেখা স্লিপ দেওয়া হোক। বেরোনোর সময়ে টাকা নিন। তাতে এই সমস্যা হয় না।”
সব শুনে বাবুলালের বক্তব্য, “নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে দেখব।” এ প্রসঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা সি পট্টাভিকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি, মেসেজেরও জবাব দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy