Advertisement
২৮ মে ২০২৪

রোগীর মৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার আরজিকরে

হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতি বা পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ উঠলেই এলাকার এক শ্রেণির লোক সেই পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। সোমবার রাতে আর জি কর হাসপাতালেও তার কোনও ব্যতিক্রম হল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০০
Share: Save:

হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতি বা পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ উঠলেই এলাকার এক শ্রেণির লোক সেই পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। সোমবার রাতে আর জি কর হাসপাতালেও তার কোনও ব্যতিক্রম হল না।

স্থানীয় এক যুবকের মৃত্যুর পরে গাফিলতির অভিযোগ তুলে এক দল যুবক তাণ্ডব চালাল হাসপাতাল জুড়ে। ইট ছুড়ে তারা হাসপাতালের নতুন তৈরি গেটের কাচ ভেঙে ফেলল। তেড়ে গেল হাসপাতাল-কর্মীদের দিকে। রোগী ও তাঁদের যে সব আত্মীয় সে সময়ে হাসপাতালে ছিলেন, তাঁরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দিলেন। ইটের ঘায়ে ভাঙল হাসপাতালের মধ্যে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ির কাচও।

আতঙ্ক শুধু হাসপাতালের ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। হামলার জেরে আশপাশের সব দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায়। এমনকী, আর জি কর রোড দিয়ে যাতাযাতকারী বাস, ট্যাক্সির উপরেও হামলা চলে বলে অভিযোগ। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও অনেক রাত পর্যন্ত আতঙ্কে দোকান খোলার সাহসই পাননি দোকানদারেরা। এলাকার মানুষের অভিযোগ, হাসপাতালে একদল লোক হামলা চালিয়ে গেল, কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলর কিংবা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতিকে এক বারের জন্যও দেখা গেল না।

তবে এ সবের মধ্যেই এ দিন কিছুটা ব্যতিক্রমী ভূমিকা দেখিয়েছে পুলিশ। হাসপাতালে বহিরাগতদের হামলার সময়ে পুলিশ সাধারণত নীরব দর্শক হয়ে থাকে। কিন্তু এ দিন পুলিশ লাঠি হাতে তেড়ে যায় হামলাকারীদের দিকে। লাঠিও চালায় তারা। পুলিশকে দেখে প্রথমে হামলাকারীরা আরও মারমুখী হয়ে উঠলেও এক সময়ে রণে ভঙ্গ দেয়। হামলাকারীদের ইটের ঘায়ে এক পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলে লালবাজারের খবর।

রাতে হাসপাতালে পৌঁছলে দেখা যায়, চার দিকে ভাঙা কাচের টুকরো। পড়ে আছে আধলা থেকে বড় বড় ইট। পুলিশ ও হাসপাতালের কর্মীদের অভিযোগ, এ দিন হাসপাতালে যারা হামলা চালিয়েছে, তারা সবাই স্থানীয় দুষ্কৃতী। মৃত রোগীর পরিবারের লোকজন চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলার পরেই আশপাশের এলাকা থেকে কিছু লোক ইট-পাথর-লাঠি হাতে তেড়ে এসে হামলা চালায়।

হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, প্রথমে কয়েক জন ইমার্জেন্সির সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। হঠাৎ কয়েক জন বাইরে থেকে ইট ছুড়তে শুরু করে।

কী নিয়ে এই অশান্তি?

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সোমবার বিকেলে জ্বর নিয়ে ভর্তি হন বেলগাছিয়া এলাকার বছর তেইশের যুবক বিশ্বজিৎ মল্লিক। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ তাঁরা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে এলেও কোনও চিকিত্সক বিশ্বজিতের প্রতি মনোযোগই দেননি। বেশ কিছুক্ষণ পরে প্রাথমিক ভাবে কিছু ওষুধ দিয়ে চিকিত্সকেরা রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। বিশ্বজিতের কাকা অমর মল্লিক বলেন, ‘‘ওর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। বারবার হেঁচকি উঠছিল। কিন্তু ওর জন্য কোনও অক্সিজেনের ব্যবস্থাও করেননি চিকিত্সকেরা।’’ পরিবারের বক্তব্য, রোগীকে বাড়ি নিয়ে গেলে তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। ফের আর জি করে নিয়ে এলে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মৃত্যু হয় বিশ্বজিতের।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এর পরেই বেলগাছিয়া এলাকা থেকে জড়ো হতে থাকে অনেকে। তারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। চিকিত্সকদের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডাও হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বহিরাগতদের ডেকে এনে ইট ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ডিসি (উত্তর) শুভঙ্কর সিংহ সরকারের নেতৃত্বে হাসপাতাল চত্বরে নামে বিশাল পুলিশবাহিনী। পুলিশকর্মীরা হাসপাতালে বিক্ষোভকারীদের উপরে লাঠিও চালান। শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড়। যদিও লাঠিচার্জের ঘটনা অস্বীকার করেছেন যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার।

চিকিত্সকেরা জানাচ্ছেন, রোগীকে যখন তাঁর পরিবারের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে আসেন, তখনই রোগীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাই প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করে দেওয়া হয়। ওই চিকিত্সকেরা জানান, তখন পরিবারের লোকেরাই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে চান। পরের বার ইমার্জেন্সিতে যখন তাঁকে নিয়ে আসা হয়, তখন তাঁর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, চিকিৎসকদের প্রায় কিছুই করার ছিল না। কিন্তু চিকিত্সায় গাফিলতির যে অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের লোক, যার জন্য হাসপাতালে তাণ্ডব চালানো হল, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বেশি রাত পর্যন্ত সেই গাফিলতি নিয়ে কোনও অভিযোগই দায়ের করেনি কেউ। অভিযোগ জমা পড়েনি পুলিশের কাছেও। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পুজোর উদ্বোধনে বাইরে আছি। খোঁজ নিয়ে পরে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RG kar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE