বাঁ দিক থেকে ফিরহাদ হাকিম, শামস ইকবাল এবং মহম্মদ ওয়াসিম। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচে ঝুপড়ির উপর বহুতল ভেঙে পড়ে ন’জনের মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় রাজ্য। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ওই বহুতলের প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম। মঙ্গলবার আদালত তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর সঙ্গে ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবালের ছবি ইতিমধ্যে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। যা নিয়ে কাউন্সিলর-প্রোমোটারের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু ওই বহুতল নির্মাণের কথা কি কাউন্সিলর জানতেন? পুলিশ ভ্যানে ওঠার সময় অভিযুক্ত প্রোমোটারের উদ্দেশে এই প্রশ্ন করতেই তিনি মাথা নাড়লেন। মঙ্গলবার বিকেলে ধৃত ওয়াসিম ওই প্রশ্নের জবাবে মাথা নেড়ে ‘না’ বললেন নাকি প্রশ্নের জবাব দিতে চাইলেন না, তা তাঁর শারীরী ভাষা থেকে তা স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশ ভ্যানে উঠে প্রোমোটার এ-ও বললেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ার জানত।’’ কিন্তু কোন ইঞ্জিনিয়ারের কথা বলতে চাইলেন, সেটাও স্পষ্ট করেননি।
রবিবার মাঝ রাতে কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে। পরে জানা যায়, বেআইনি ভাবে মাথা তুলেছিল ওই বহুতল। কলকাতা পুরসভার তরফেও স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, ওই বহুতলটি নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুমতি ছিল না। তার পর সংশ্লিষ্ট বহুতলের প্রোমোটার গ্রেফতার হয়েছেন। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে অসুস্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার অকুস্থলে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। অন্য দিকে, এমন অবৈধ নির্মাণ তৈরিতে গাফিলতি ঠিক কার, তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের দু’বারের কাউন্সিলর শামসের সঙ্গে প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমকে একটি অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে ওই কাউন্সির অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
অন্য দিকে, যেখানে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে তা কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কলকাতা বন্দর এলাকার মধ্যে পড়ে। এই দুর্ঘটনা নিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমি দূর করতে পারছি না।’’ মন্ত্রী এ-ও বলেছেন, বেআইনি নির্মাণ ঠেকানার চেষ্টা তিনি চালিয়ে যাবেন, হাল ছাড়বেন না। মেয়র দাবি করেছেন গার্ডেনরিচের বেআইনি নির্মাণের বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। তিনি কাঠগড়ায় তুলেছেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের।
বিরোধীদের অভিযোগ, কাউন্সিলরের মদতেই প্রোমোটারেরা বেআইনি নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি দাবি করেছে, গার্ডেনরিচ, মোমিনপুর, খিদিরপুর-সহ কলকাতার যেখানে যেখানে বেআইনি নির্মাণে রমরমা চলছে, তা গোটাটাই হচ্ছে কাউন্সিলর, প্রোমোটার, পুলিশ এবং পুর আধিকারিকদের একাংশের যোগসাজশে। যদিও ফিরহাদের যুক্তি, ‘‘কাউন্সিলর তো পরে। এটা তো দেখার কাজ বিল্ডিং ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকদের। যাঁরা মাইনে পান। আমরা তাঁদের শোকজ় করেছি। ভিতের সময়েই যদি ধরা যায় তা হলে এগুলো হয় না।’’ বস্তুত, কলকাতা পুরসভায় মেয়র পরিষদে বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্ব ফিরহাদেরই। তিনি তা মেনে নিয়েও জানালেন বেআইনি নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। মেয়রের দাবি, ২০২১ সাল থেকে তিনি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার বিষয়ে পদক্ষেপ করছেন। তাঁর সময়ে কলকাতায় ৮০০-র বেশি বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হয়েছে বলেও দাবি ফিরহাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy