Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Behala Road Accident

বাংলা মাধ্যম বলে ‘অবহেলা’! ছাত্র-মৃত্যুতে প্রশ্নে পুলিশি ভূমিকা

এই দুর্ঘটনার পরেই স্থানীয়দের মধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের গাড়ি, বাইক, সরকারি বাস ভাঙচুর করার পাশাপাশি আগুন ধরানো হয় পুলিশের গাড়িতেও।

যে-কে-সেই: দুর্ঘটনার পরেও চলছে গাড়ির ফাঁক গলে কোনও রকমে রাস্তা পারাপার। শুক্রবার, বেহালায়।

যে-কে-সেই: দুর্ঘটনার পরেও চলছে গাড়ির ফাঁক গলে কোনও রকমে রাস্তা পারাপার। শুক্রবার, বেহালায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৫৩
Share: Save:

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বাইরে পুলিশি তৎপরতা থাকে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বাংলা মাধ্যম স্কুলের বাইরে সেই তৎপরতার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না! শুক্রবার বেহালায় আট বছরের এক পড়ুয়াকে স্কুলের সামনেই লরি পিষে দিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরে এমনই অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। যা সামনে এনেছে পুলিশি গাফিলতির এক নতুন দিক। যা নিয়ে দিনের শেষে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে লালবাজারকে। কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল যদিও দাবি করেছেন, ‘‘স্কুল শুরু এবং ছুটির সময়ে সব ধরনের স্কুলের সামনেই পুলিশ থাকে। বেহালাতেও ছিল।’’

এ দিন সকালে বাবার সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছিল ডায়মন্ড হারবার রোডের বড়িশা উচ্চ বালিকা বিদ্যামন্দিরের (প্রাথমিক বিভাগ) ছাত্র সৌরনীল সরকার (৮)। স্কুলের সামনেই তাকে পিষে দিয়ে যায় একটি লরি। গুরুতর জখম হন সৌরনীলের বাবা সরোজকুমার সরকারও। তাঁর পায়ের উপর দিয়ে লরির চাকা চলে যায়।

এই দুর্ঘটনার পরেই স্থানীয়দের মধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের গাড়ি, বাইক, সরকারি বাস ভাঙচুর করার পাশাপাশি আগুন ধরানো হয় পুলিশের গাড়িতেও। এর পরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরানো হয় ডায়মন্ড হারবার রোড ট্র্যাফিক গার্ডের কার্যালয়ে। কবে এই ভাবে কলকাতা পুলিশের কার্যালয়ে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে? মনে করতে পারছেন না কেউই।

প্রশ্ন উঠছে, কেন এই পর্যায়ের ক্ষোভ তৈরি হল পুলিশের বিরুদ্ধে?

ডায়মন্ড হারবার রোডে এই ধরনের দুর্ঘটনার খবর মেলে প্রায়ই। কিছু দিন আগেই ঠাকুরপুকুর থানার এক পুলিশকর্মীকে পিষে দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল বেপরোয়া লরি। কিন্তু, তার পরেও পরিস্থিতির বিশেষ বদল হয়নি। অভিযোগ, কিছু গলিপথ থেকে সরাসরি ডায়মন্ড হারবার রোডে ওঠার অভিমুখ বন্ধ করা এবং একটি অটো স্ট্যান্ড সরানো ছাড়া পুলিশের তরফে তেমন কিছুই করা হয়নি।

স্থানীয়দের দাবি, রাতে এবং ভোরের দিকে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হলে জীবন বাজি রেখে চলতে হয়। ডায়মন্ড হারবার রোডের বিশেষত্ব হল, পাশের জেমস লং সরণি থেকে প্রচুর গলিপথ তাতে এসে মিশেছে। বেশ কিছু জায়গায় নতুন করে ট্র্যাফিক সিগন্যাল এবং স্পিডোমিটার বসানো হলেও তা মানা হচ্ছে কি না, দেখার কেউ থাকেন না। অভিযোগ, লরির দৌরাত্ম্যও কিছুতেই বন্ধ হয় না। লরি ধরা পড়লেও ‘লঘু ধারা’য় মামলা করেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এর সঙ্গেই চলতে থাকে যেমন খুশি রাস্তা পারাপারের প্রবণতা। এর মধ্যেই সামনে এসেছে বাংলা মাধ্যম স্কুলের ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের দায়সারা মনোভাবের অভিযোগ।

বড়িশা উচ্চ বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রাথমিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অর্জুন রায় বলেন, ‘‘পাশের বিড়লা স্কুলের সামনে ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে। ন্যাশনাল জেমস স্কুলেও থাকে। কিন্তু এখানে থাকে না। আমাদের ছাত্রদের কোনও নিরাপত্তা নেই। বাংলা মাধ্যমের গরিব ঘরের ছাত্রেরাই বেশি এখানে আসে। তাই কি নজর দেওয়া হয় না?’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বেহালা চৌরাস্তা ঘিরে বড়িশা অঞ্চলে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আটটি সরকারি এবং বেসরকারি স্কুল রয়েছে। অভিযোগ, সরকারি বড়িশা হাই স্কুল, বড়িশা জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ এবং বড়িশা গার্লস স্কুলের সামনে প্রতিদিনই দেখা যায়, পড়ুয়ারা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। অন্য দিকে, পাশেই জেমস লং সরণির এমপি বিড়লা হাই স্কুল, ন্যাশনাল জেমস স্কুল এবং শাহ পাবলিক স্কুলের সামনে পুলিশি নজরদারি থাকে চোখে পড়ার মতো। বেহালা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস বেরাও বললেন, “পড়ুয়া কেন, আমরাও রাস্তা পেরোতে গিয়ে হিমশিম খাই। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে কিন্তু এই অবস্থা হয় না। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তাকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি, লাভ হয়নি।”

অভিযোগ, এই বৈষম্য চোখে পড়ে গোটা কলকাতা জুড়েই। কসবার ডিপিএস রুবি পার্ক এবং গার্ডেন হাই স্কুলের ক্ষেত্রে যতখানি তৎপরতা পুলিশের তরফে দেখা যায়, ততটা ওই এলাকার সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে দেখা যায় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মিন্টো পার্ক চত্বরে লা মার্টিনিয়ারের জন্য রীতিমতো যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেই তৎপরতা বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির ক্ষেত্রে কোথায়? প্রশ্ন এমনই বাংলা মাধ্যম স্কুলের এক অভিভাবকের।

বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্যের দাবি, “বিবেকানন্দ রোডের মুখে ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে। কিন্তু স্কুলের সামনে থাকে না। অনেক ছোট ছোট পড়ুয়াকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পেরোতে হয়। এ দিনের ঘটনার পরে অভিভাবকদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। আমরাও পুলিশকে চিঠি দিচ্ছি।” হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বললেন, “আমাদের স্কুলের সামনের রাস্তা একমুখী হওয়ায় একটু রক্ষা। তবু পুলিশের এ ক্ষেত্রে তৎপর হওয়া দরকার।”

খুদে পড়ুয়া সৌরনীলের মৃত্যুতে কি বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির সামনে পুলিশি তৎপরতা বাড়বে? এ দিন সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাস্থলে বুম-ব্যারিয়ার বসিয়েছে লালবাজার। যদিও ওই ব্যবস্থা আদৌ কত দিন কার্যকর থাকবে, তা নিয়ে সংশয়ে এলাকাবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Student Accident Behala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE