Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নেতাদের ধমকেই গনো-র দাপট হাওয়া

দলের শীর্ষনেতাদের ধমকে বৃহস্পতিবার মৌনী নিয়েছিলেন নাকতলার গনোদা ওরফে ভাস্কর দাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের মুখ খুললেন তিনি। তবে গলায় আগের তেজ উধাও!

ভাস্কর দাম ওরফে গনোদা

ভাস্কর দাম ওরফে গনোদা

দেবাশিস দাস
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫৩
Share: Save:

দলের শীর্ষনেতাদের ধমকে বৃহস্পতিবার মৌনী নিয়েছিলেন নাকতলার গনোদা ওরফে ভাস্কর দাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের মুখ খুললেন তিনি। তবে গলায় আগের তেজ উধাও!

গত শুক্রবার হাইকোর্টের নির্দেশে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিরাট বাহিনী নিয়ে গিয়েছিলেন নাকতলার একটি জমি দখলমুক্ত করতে। এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর সুস্মিতা দামের স্বামী গনোদা ওই সময়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেরোসিন তেলের বোতল বার করে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘জমিতে যদি একটি পুলিশও ঢোকে, তা হলে আমার লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে!’’ হাইকোর্টের নির্দেশ পালন না করেই সে দিন ফিরে আসেন পুলিশ কমিশনার। এর জন্য গত বুধবার হাইকোর্টে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েন তিনি। ওই দিনও গনোদা আনন্দবাজারকে বলেছিলেন, কোনও মতেই তিনি ওই জমির দখল ছাড়বেন না। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘আমার সঙ্গে পাঁচশো ছেলে আছে, তারাও তৈরি! জমি মুক্ত করতে হলে সবার লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে!’’

গনো-র এই বিপুল ‘দাপটে’ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ ছিল, বেআইনি ভাবে মাঠটি বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া দিয়ে মোটা টাকা আয় করছেন গনো ও তাঁর দলবল। মাঠের এক ধারে তৈরি হয়েছে একটি ক্লাবও। রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর মদতেই গনো-র এই দাপট বলে অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ওই মন্ত্রীর প্রভাবেই জমি দখল করতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে খোদ পুলিশ কমিশনারকেও!

এলাকায় মানুষ গনোর এই দাপট যে ভাল চোখে দেখছেন না, তা বুঝেই শেষ পর্যন্ত তাঁকে লাগাম পরাতে আসরে নামেন তৃণমূলের শীর্ষনেতারা। সেই কারণেই গত বৃহস্পতিবার মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন তিনি। শুক্রবারও তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেননি। অনেক সাধ্যসাধনার পরে ফোন তুলে বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি বিচারাধীন। তাই আইনি পথেই ফয়সালা হবে।’’

স্থানীয়দের একাংশ বলেছেন, আগের প্রতাপ আর নেই গনোর! বিয়েবাড়ি ভাড়ার টাকা কোথায় যাচ্ছে, এ নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, যে দলের ছাতার তলায় থেকে গনো এই কাজ করেছে, তাদেরই উচিত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে নিজেদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন রাখা। স্থানীয় সূ্ত্রের খবর, বিয়ে বাড়ির ভাড়ার টাকার হিসেব নিয়ে গনো-র সঙ্গে বছর কয়েক আগে ক্লাবের গোলমালও হয়েছিল। ওই সময়ে তিনি ওই ক্লাবের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাতেন বলে এলাকার কয়েক জন জানান। এর পরে গনো ওই ক্লাবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তিনি ধীরে ধীরে আবার ক্লাবে নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় ফেরেন। ফের শুরু হয় মাঠ নিয়ে নানা কারবারের রমরমা।

তবে মাঠে বিয়েবাড়ি ও মেলার ভাড়া থেকে আয়ের রাস্তা যে আপাতত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তা এ দিন গনো-র সঙ্গীসাথীদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলে বোঝা গিয়েছে। তবে মাঠ বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে ‘সবুজ বাঁচাও আন্দোলন’ গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। এ দিন ক্লাবের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা চাই এখানে একটা খেলার মাঠ হোক। তৈরি হোক একটি কমিউনিটি হল। তাই আমরা শুক্রবার থেকে সই সংগ্রহ করতে শুরু করেছি।’’

তবে এলাকার মানুষ যে এই সই সংগ্রহে বিশেষ সাড়া দিচ্ছেন না, তা তাঁরা নিজেরাই মেনে নিয়েছেন। এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘গায়ের জোরে পুলিশ ফেরানো যায়। কিন্তু আইনকে তো আর পাল্টে দেওয়া যায় না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE