Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

মালকিন নেমে গেলেন ইম্ফলে, বিমানে লুকিয়ে দমদমে চলে এল পোষ্য বেড়াল

কথায় বলে বেড়ালের জান! আর এ তো মহা দুষ্টু, হৃষ্টপুষ্ট এক পাহাড়ি বেড়াল। ভয়ডর নেই বিন্দুমাত্র। চুপটি করে ঘাপটি মেরে বসেছিল বিমানের পেটের ভিতরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৫ ২০:৫৩
Share: Save:

কথায় বলে বেড়ালের জান!

আর এ তো মহা দুষ্টু, হৃষ্টপুষ্ট এক পাহাড়ি বেড়াল। ভয়ডর নেই বিন্দুমাত্র।

চুপটি করে ঘাপটি মেরে বসেছিল বিমানের পেটের ভিতরে। ঠিক যেখানে যাত্রীদের মালপত্র থাকে। মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেলে ইম্ফল থেকে কলকাতায় নেমে আসে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। সেই বিমান থেকে যাত্রীদের মালপত্র যখন নামানো হচ্ছিল, ঠিক তখনই সেই ‘কার্গো-হোল্ড’-এ ঘাপটি মেরে বসে থাকতে দেখা যায় বেড়ালটিকে। সাদা-কালো ডোরাকাটা, সাইজে বেশ বড়। দেখেই বিমানসংস্থার কয়েকজন কর্মী চিৎকার করে ওঠেন, ‘‘আরে! আবার এসেছে! এই তো সেই বেড়াল।’’

আবার কেন?

সহকর্মীদের প্রশ্ন শুনে এক কর্মী বলেন, ‘‘আরে! এ দিন সকালে দিল্লি থেকে এই বিমানটি যখন কলকাতায় নেমে এসেছিল তখনও বিমানের পেটের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এই বেড়ালটা। খাঁচায় ছিল। কিন্তু, খাঁচার দরজাটা আলগা ছিল। তাই, খাঁচা থেকে বেরিয়ে পড়েছিল সে।’’ সকালে অনেক চেষ্টা করেও ধরা যায়নি তাকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার মালকিন বসে রয়েছেন আইজল যাওয়ার বিমানে। তিনিই দিল্লি থেকে বিমানে চাপিয়ে সাধের পোষ্যকে নিয়ে যাচ্ছিলেন আইজল। বেড়ালকে বাগে আনতে তৎক্ষণাৎ ডাক পড়ে মালকিনের। মালকিন নেমে আসেন। হাসি হাসি মুখে বিমানের পেটের কাছে গিয়ে মিষ্টি করে ডাকতেই সুরসুর করে সেই বেড়াল একেবারে মালকিনের পায়ের তলায়। গলায় তার সবুজ রঙের কলার। সকালে তাকে খাঁচায় পুরে তুলে দেওয়া হয়েছিল আইজলের বিমানের পেটে।

কিন্তু, সন্ধ্যার মুখে সে ফিরে এল কী করে?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেড়ালের মালকিন আইজল নেমে সেখানকার বিমানবন্দরের কনভেয়ার বেল্টের সামনে হা-পিত্যেশ করে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেন সাধের বেড়ালের জন্য। শেষে দেখেন খাঁচা এলেও তা খালি। ফলে যারপরণাই ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি চিৎকার জুড়ে দেন। ততক্ষণে আইজল থেকে বেড়াল নিয়ে ডানা মেলে উড়ে গিয়েছে বিমান। বিমানসংস্থার এক অফিসারের কথায়, ‘‘আইজলে যে কর্মীরা মালপত্র নামিয়েছিলেন তাঁরা খেয়াল করেননি খাঁচার ভিতের বেড়াল নেই। সেই বেড়াল আবার খাঁচা খোলা পেয়ে সেখান থেকে নেমে লুকিয়ে পড়ে অন্য মালপত্রের আড়ালে।’’

আর এখানেই উঠেছে তার প্রাণশক্তির প্রশ্ন। নিয়ম মতো বিমানের পেটে যেখানে মালপত্র নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে অক্সিজেনের সরবরাহ থাকে না। কিন্তু, কেউ কোনও পোষ্য নিয়ে গেলে তা আগে থেকে পাইলটকে জানানো হয়। পাইলট ককপিট থেকে একটি সুইচ মারফত ওই কার্গো-হোল্ডে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। এ দিনও দিল্লি থেকে রওনা হওয়ার আগে ওই বেড়ালের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু, সেই অক্সিজেন আইজল পর্যন্তই সরবরাহ করার কথা। কারণ, বেড়াল নেমে যাওয়ার কথা ছিল আইজলে। এ দিনও সেই অক্সিজেন সরবরাহ আইজলের পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। অফিসারদের ধারণা, আইজল থেকে ইম্ফল এবং সেখান থেকে কলকাতায় আসার পথে অক্সিজেন সরবরাহ না থাকলেও বেড়ালের তাতে কোনও ক্ষতি হয়নি। এক অফিসারের কথায়, ‘‘ততক্ষণে সেখানে অনেক অক্সিজেন মজুত হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া ইম্ফল বিমানবন্দরে তো কার্গো-হোল্ডের দরজা খোলা হয়েছিল। তখন বাইরের বাতাসও ঢুকেছে।’’

বেড়ালের অবশ্য তা নিয়ে বিশেষ দুশ্চিন্তা ছিল না। সে দিব্যি মালপত্রের মধ্যে আয়েসে বসে প্রথমে আইজল থেকে ইম্ফল ও পরে ইম্ফল থেকে কলকাতায় উড়ে আসে। একেবারেই বিনা পয়সায়। কলকাতায় বিমানসংস্থার এক কর্মী বলেন, ‘‘পড়ন্ত বিকেলে ওই খোলের মধ্যে অত বড় বেড়ালকে দেখে প্রায় ছোটখাট বাঘ বলে মনে হচ্ছিল। কেউ তো সাহস করে এগোচ্ছিলই না।’’ শেষে একটি খালি খাঁচা যোগাড় করে তাঁকে কাকুতি-মিনতি করে তার ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। খাঁচায় বন্দি বেড়ালের আপাতত ঠাঁই হয়েছে কলকাতায় বিমানসংস্থার মালখানায়। বুধবারের উড়ানে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে আইজলে।

খাঁচার দরজা আলগাই রয়েছে। কর্মীদের আশঙ্কা, আবার না খুলে যায় তার দরজা।

অন্য বিষয়গুলি:

cat calcutta airport plane reaches
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE