প্রতীকী ছবি।
শৌচালয়ে রাখা বালতির জলে ডুবে তিন বছরের একটি শিশু কী ভাবে মারা যেতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই নাতির মৃত্যুতে দিদিমার অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করল আনন্দপুর থানার পুলিশ। যদিও মঙ্গলবারের ওই অভিযোগের পরে বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এখনও খোঁজ মেলেনি শিশুটির বাবার। এ দিকে, কবরস্থ করা হয়ে গিয়েছে তার দেহ। এখন কবর থেকে দেহ তুলে ময়না তদন্ত করানোর অনুমতি পেয়ে গিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাত ৯টা নাগাদ, আনন্দপুর থানা এলাকার নোনাডাঙার একটি আবাসনে। হঠাৎ কান্নার আওয়াজ শুনতে পান সেখানকার বাসিন্দারা। দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসতেই তাঁরা দেখেন, ২০৬ নম্বর ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। ঘরের ভিতরে খাটের উপরে শোয়ানো রয়েছে প্লাস্টিক জড়ানো বছর তিনেকের শিশুটির দেহ। তাকে ঘিরে কেঁদে চলেছেন পরিবারের সকলে। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিশুটির নাম রোহন মণ্ডল (৩)। তার বাবা বিজয় মণ্ডল তিলজলার একটি জুতোর কারখানার কর্মী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলে রোহন এবং স্ত্রীকে নিয়ে পঞ্চান্নগ্রামে ভাড়া থাকেন বিজয়। স্ত্রী সোনিও জুতোর কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাতে তাঁরা ছেলের মৃতদেহ নিয়ে নোনাডাঙার আবাসনে বিজয়ের মায়ের কাছে আসেন। সেখানে এসে বিজয় জানান, শৌচালয়ের বালতিতে পড়ে ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তিনি একই কথা জানিয়েছিলেন স্ত্রীকেও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজয় দাবি করেছেন, সোনি কাজে যাওয়ায় বাড়িতে একাই ছিলেন তিনি। কোনও কারণে ঘর থেকে বেরিয়ে কিছু ক্ষণ পরে ঢুকে তিনি দেখেন, শৌচালয়ের বালতিতে পড়ে গিয়েছে রোহন। তাঁর আরও দাবি, এর পরে সোনিকে কাজ থেকে ডেকে এনে দু’জনে মিলে হাসপাতালে নিয়ে যান রোহনকে। সেখানে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত বলে জানান। স্থানীয় বাসিন্দা পাপিয়া ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা শিশুটির মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এমন কী করে হল? ও কিছুই বলতে পারেনি। শুধু জানায়, বিজয় হঠাৎ বিকেলে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসতে বলেছিল। বাড়ি ফিরে সোনি দেখে, ছেলের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ ঘটনার পরের দিন, সোমবার রোহনের শেষকৃত্য করে পরিবার। স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘রবিবার রাতেই ওরা দেহ কবর দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর শংসাপত্র না থাকায় পারেনি। সারা রাত একটি প্লাস্টিকে জড়িয়ে শিশুটিকে ঘরেই রেখে দেয়। পরের দিন কবরস্থ করে।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শিশুটিকে খুন করা হয়েছে। একই দাবিতে আনন্দপুর থানার দ্বারস্থ হয়েছেন শিশুটির দিদিমা। নোনাডাঙার স্থানীয় বাসিন্দা ভোলা ঘোষ বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই ছেলেকে সহ্য করতে পারত না বিজয়। এখানে থাকার সময়ে বাচ্চাকে এমন মারধর করে যে, নাক, মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায়। এর পরে সকলে মিলে ওকে মারধর করে সাবধান করি। পরে গিয়ে পঞ্চান্নগ্রামে ভাড়া থাকতে শুরু করে।’’
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে রোহনের দিদিমা থানায় ফোন করে তার মৃত্যুর কথা জানান। পরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এক তদন্তকারী পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘শিশুটির দেহ তোলার আইনি অনুমতি মিলেছে। দেহটি তুলে ময়না তদন্তে পাঠানো হবে। তার রিপোর্ট এলেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy