বিতর্ক: আপত্তি এই পোশাকেই। নিজস্ব চিত্র
পরনে ধুতি। তাই ‘নিরাপত্তা’র প্রশ্নে পার্ক সার্কাস এলাকার একটি মল-এ ঢুকতে বাধা এসেছে বলে অভিযোগ।
শনিবার বন্ধুদের সঙ্গে কোয়েস্ট মলে গিয়েছিলেন আশিস অভিকুন্তক। তিনি আমেরিকার রোড আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিত্রপরিচালক হিসেবেও সুপরিচিত। অভিযোগ, ধুতি-পাঞ্জাবি পরে তিনি পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে মলের দরজার সামনে দাঁড়াতেই নিরাপত্তারক্ষী জানান, ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না তাঁকে। রক্ষী ওয়াকিটকিতে এক কর্তাকেও খবর পাঠান। এ সব যখন ঘটছে, তখন পাশে দাঁড়িয়ে আশিসের বন্ধু দেবলীনা সেন সবটা ভিডিও রেকর্ড করেন। ভিডিওটি পরে ফেসবুকে আপলোড করে দেন তিনি। পরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, আশিসকে রক্ষীরা বলেছেন যে ধুতি এবং লুঙ্গি পরে তাঁদের শপিং মলে ঢোকা যায় না।
খাস কলকাতায় দাঁড়িয়ে ধুতিতে আপত্তি শুনে অবাক হন পরিচালক ও তাঁর সঙ্গীরা। মল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চান তাঁরা। আশিসবাবুর বন্ধুদের দাবি, তাঁরা ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করতেই রক্ষীদের সুর পাল্টে যায়। আশিসবাবু নিজে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু দেবলীনার প্রশ্ন, ‘‘ধুতি-লুঙ্গির সঙ্গে নিরাপত্তার সম্পর্ক কোথায়?’’ দেবলীনা বলেন, নিরাপত্তার কারণেই মল-এর দরজায় অতিথিদের পরীক্ষা করে দেখা হয়। তাঁদের ব্যাগ দেখা হয়। তার পরে নিরাপত্তার সমস্যা তো থাকার কথা নয়! নিরাপত্তার সঙ্গে পোশাক কী ভাবে জড়িত, সেটাও বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে বলেই দাবি তাঁর। কোনও নির্দিষ্ঠ পোশাকবিধি থাকলে তার বিজ্ঞপ্তি মল-এর দরজায় থাকার কথা। সেটা ছিল না বলেই তাঁদের দাবি। কোয়েস্ট মলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দিলীপ সেন নিজেও দাবি করছেন, ‘‘কোয়েস্ট মলে পোশাকের কোনও বিধি-নিষেধ নেই। ধুতি-পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে তো নয়ই।’’
আরও পড়ুন:কলকাতায় ফের অস্থায়ী উপাচার্য
এ দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই মন্তব্য করেন, বিশ্বের নানা প্রান্তের নামকরা বিপণির পোশাক পাওয়ার ঠিকানা ওই শপিং মল। সেখানে পোশাক নিয়ে এমন ঘটনা খুব দুঃখজনক। আবার ফেসবুকেই অবশ্য আর এক অংশ বলছে, পোশাকে নিষেধাজ্ঞা এ শহরে নতুন নয়। কয়েক মাস আগেই পার্ক স্ট্রিটের একটি বিখ্যাত রেস্তোরাঁয় পোশাক ‘ঠিক না’ থাকায় এক গাড়িচালককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কয়েক সপ্তাহ আগে বাচিক শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় একই রকম হেনস্থার সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন আর একটি রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে। এ দিনের ঘটনার পরে সুজয়বাবু বলেন, ‘‘এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এ দেশে হচ্ছেটা কী? কোন শহরে বাস করছি!’’
এ দিনের ঘটনা শুনে কবি শঙ্খ ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘আমি তো ধুতি পরেই কোয়েস্ট মলে গিয়েছি। আমার সঙ্গে কিছু ঘটেনি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা খুবই আপত্তিজনক।’’ রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও জানান, ‘‘ধুতি-পাঞ্জাবি সব সময়ে পরি। তাই ওই মলে যখন গিয়েছিলাম, তখনও সেই পোশাক ছিল। ঢুকতে কোনও সমস্যা হয়নি।’’
তা হলে কেন বাধা পেলেন আশিস? বিভ্রান্তি সেখানেই। যদি নিরাপত্তাই কারণ হয়, তা হলে ইংরেজি বলে ছাড় পেলেন কী করে, সেটাও প্রশ্ন। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আশিসবাবু যখন মলে যান, তখন কোনও কারণে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী তাঁকে আটকেছিলেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরেই তাঁকে ছে়ড়ে দিতে বলেন। গোটা সমস্যাটি ২০ সেকেন্ডেই মিটে গিয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
আশিসবাবুর নিজের মন্তব্য, ‘‘এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই বলতে চাই না। নীরবতাই আমার প্রতিবাদ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy