ফাইল চিত্র
রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে বা কেউ জখম হলে ওই রাস্তা যে ঠিকাদার সংস্থা তৈরি করেছে, তাদেরই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমনই একটি বিল লোকসভায় অনুমোদিত হয়ে রাজ্যসভায় গিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে অন্তত এক লক্ষ টাকা। রাস্তার মান নিয়ে অভিযোগ কমবেশি সারা দেশেই। এ বার রাস্তা তৈরির কাজে গাফিলতির প্রবণতা রুখতেই কড়া আইন আনতে আগ্রহী কেন্দ্র। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ওই বিল আইনে পরিণত করার পিছনে কতটা আগ্রহী রাজ্যের শাসক দল? কলকাতা পুরসভা কি এ নিয়ে কিছু ভাবছে?
রাস্তার হাল নিয়ে অভিযোগ কলকাতা শহরে নতুন কিছু নয়। বেহাল রাস্তার জন্য দুর্ঘটনাও আকছার ঘটছে। তাই উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দাদের অনেকেই মনে করেন, এ রাজ্যেও ওই আইন প্রয়োগ হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক। সোমবার কলকাতা পুরসভায় রাস্তার হাল ফেরানো নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই বিলের বিষয়ে প্রশ্ন করতেই মেয়রের জবাব ছিল, ‘‘আমি কিছু জানি না।’’
২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিলের খসড়া তৈরি করে। যা ‘মোটর ভেহিক্লস (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৭’ নামে পরিচিত। এই বিল আনার পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক উন্নয়ন দফতর যে যুক্তি খাড়া করেছে তা হল, ২০১৬ সালে খারাপ রাস্তার জন্য দেশে ১২৮৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মারা গিয়েছেন ৫৮৯ জন। অথচ, ওই সব রাস্তা যাঁরা বানিয়েছেন, তাঁদের কাউকেই দায়ী করা যায়নি। সে সব অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই ওই বিল আনা হয়েছে। কলকাতার মেয়র না-জানলেও বিলটির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘ওই সংশোধনী বিলে রাস্তার দুর্ঘটনা ছাড়াও কিছু বিষয় রয়েছে, যা রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করারই শামিল। তাই আপত্তি জানিয়েছি। এখন ওই বিল পাঠানো হয়েছে সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে।’’ খারাপ রাস্তার জেরে দুর্ঘটনার জন্য ঠিকাদারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করার বিষয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে রোড সেফটি কাউন্সিল রয়েছে। সেখানে পরিবহণ, পূর্ত-সহ একাধিক দফতরের অফিসারেরা রয়েছেন। তাঁরা প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেন।’’
তবে ওই বিল আইনে পরিণত হলে রাস্তা নির্মাণে স্বচ্ছতা আসবে বলেই মনে করছেন সরকারের পদস্থ অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারেরা। কলকাতা পুরসভার অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের মতে, ঠিকাদারদের কাছে এই বিল আতঙ্কের কারণ হলেও মানুষের প্রয়োজনে তা হওয়া দরকার। রাজ্য প্রশাসনেরও এমন আইন আনার বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া উচিত। কারণ, এখন এমনই রাস্তা তৈরি হচ্ছে, যা বেশি দিন টিকছে না। অল্প বৃষ্টিতেই পথ ভরে যাচ্ছে খানাখন্দে। অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের একাংশকে ‘তুষ্ট’ করলেই পাশ হয়ে যাচ্ছে টাকার বিল। আর সেই ‘তুষ্ট’ করার মাসুল গুনছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, ঠিকাদার মুনাফা করতে গিয়ে আপস করছেন রাস্তার মানের সঙ্গে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার হাড়গোড় বেরিয়ে পড়ছে। ক্ষতিপূরণের কড়া আইনে নির্মাণকারী সংস্থাকে বাঁধা হলে সেই আশঙ্কা কমানো যাবে বলেই মনে করছেন পুর কর্তাদের একটি বড় অংশ।
এক ঠিকাদারের আবার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘পুর দফতর থেকে স্থানীয় নেতা, বিধায়ক, পুলিশ— সকলকে সন্তুষ্ট না করলে তো কাজই করতে পারব না। বখরা না দিলেই শুনতে হবে হুমকি। তাঁদের সন্তুষ্ট করার টাকা তো আর বিলে ধরা থাকে না। তাই কাজের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়। সেই কারণেই রাস্তার মান খারাপ হয়।’’
কলকাতার রাজনীতি, কলকাতার আড্ডা, কলকাতার ময়দান, কলকাতার ফুটপাথ - কলকাতার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy