Advertisement
২০ মে ২০২৪
Dangerous Old House In Kolkata

‘বিপজ্জনক’ প্রাক্তন মেয়রের বাড়িও! ভাড়াটেদের হুঁশ নেই ঝড়বৃষ্টিতেও

তীব্র গরম থেকে দিন দুয়েকের স্বস্তি মিলেছে ঝড়বৃষ্টির কারণে। কিন্তু তার মধ্যেই চিন্তা বেড়েছে শহরের পুরনো, বিপজ্জনক বাড়িগুলি নিয়ে। কারণ, অতীতে এমনই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ওই ধরনের বাড়ি ভেঙে পড়ে একাধিক জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভগ্নপ্রায়: শ্যামবাজার মোড়ের কাছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের পরিবারের একটি বাড়ি এই অবস্থায় থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় আটকে সেটির সংস্কার। বুধবার।

ভগ্নপ্রায়: শ্যামবাজার মোড়ের কাছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের পরিবারের একটি বাড়ি এই অবস্থায় থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় আটকে সেটির সংস্কার। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নীলোৎপল বিশ্বাস ও মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৪ ০৭:৫৮
Share: Save:

তিনি কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। অথচ শ্যামবাজার মোড়ের কাছে তাঁর বাড়িই ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে। অবস্থা এমনই যে, যখন-তখন সেটি ভেঙে পড়ে বিপদ ঘটতে পারে। ওই বাড়ির নীচ দিয়ে সর্বক্ষণ যাতায়াত করেন সাধারণ মানুষ। চারটি দোকানও রয়েছে বাড়ির নীচে। কিন্তু সেই দোকানের মালিক, ওই বাড়ির ভাড়াটেদের কোনও হেলদোল নেই। বিপদ জেনেও জায়গা ছাড়েন না তাঁরা। অভিযোগ, সংস্কারের ব্যাপারে মালিকের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা করতেও তাঁরা রাজি নন।

তীব্র গরম থেকে দিন দুয়েকের স্বস্তি মিলেছে ঝড়বৃষ্টির কারণে। কিন্তু তার মধ্যেই চিন্তা বেড়েছে শহরের পুরনো, বিপজ্জনক বাড়িগুলি নিয়ে। কারণ, অতীতে এমনই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ওই ধরনের বাড়ি ভেঙে পড়ে একাধিক জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ করতে বেরিয়েই চোখে পড়ল শ্যামবাজার মোড়ের এই বাড়িটি। জানা গেল, ১১৪/২এ বিধান সরণির বাড়িটি কলকাতার প্রাক্তন মেয়র গোবিন্দচন্দ্র দে-র। তিনি কলকাতার মেয়র ছিলেন ষাটের দশকের শেষ দিকে। তাঁর পরিবার সূত্রের খবর, এই বাড়িটি তিনি কিনেছিলেন ১৯২৫ সালে। এর পরে তিনি তাঁর ছেলে সুজয়কুমার দে-র নামে বাড়িটি করে দেন। কিন্তু সুজয় বাড়িটি বিক্রি করতে চান। এখন বাড়িটির বিক্রি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। এ নিয়ে সুজয় বললেন, ‘‘ভাড়াটেরা কোনও সমঝোতাতেই আসতে রাজি নন। তাঁরা রেন্ট কন্ট্রোলে ভাড়া দেন। সেখানেও এমন অবস্থা যে, টাকা সহজে পাওয়া যায় না। তা ছাড়া, ছ’কাঠার উপরে এই বাড়ি সংস্কার করানোর মতো টাকাও নেই আমার।’’

তা হলে উপায়?

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, এই জটিলতার কারণেই শহরে প্রায় ৬০০০ বাড়ি ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৩০০০টি বাড়ি রয়েছে, যেগুলি বিপজ্জনক। এর মধ্যে আবার ১০০০টি এমন বাড়ি আছে, যেগুলি অতি বিপজ্জনক, দ্রুত ভেঙে ফেলা প্রয়োজন। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং মহাত্মা গান্ধী রোডের সংযোগস্থলে এমনই একটি বিপজ্জনক বাড়ি চোখে পড়ল, যার দেওয়াল ফুটো করে বট গাছের শিকড় নেমে গিয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে হাঁটতে গেলে মনে হয়, গোটা বাড়ি কাঁপছে। প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে ইট-সুরকি। সেই বাড়ির এক বাসিন্দা রমেন মণ্ডল বললেন, ‘‘৫০ বছর ধরে ভাড়ায় আছি। সংস্কারের জন্য উঠে গেলে আর জায়গা পাব না।’’ একই দাবি, শোভাবাজার মোড়ের অরবিন্দ সরণির ৩০ নম্বর বাড়িটির ভাড়াটেদের। সেখানে এমন ভাবে বাড়ির অংশ ঝুলছে যে, সেটি যে কোনও দিন রাস্তার উপরে ভেঙে পড়তে পারে। বাড়িটির নীচে দোকান চালানো গৌরী সোনকর বলেন, ‘‘প্রাণ যাওয়ার হলে যাবে, জায়গা ছাড়া যাবে না।’’ মল্লিকবাজার মোড়ের কাছে পার্ক স্ট্রিটের একটি বাড়ির ভগ্নপ্রায় অবস্থা। সেটির নীচের তলায় পর পর দোকান থাকলেও কেউই মালিকের খোঁজ দিতে চান না।

পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, এমন বাড়ি নিয়ে কড়া অবস্থান থেকেই পুর আইনের ৪১১(১) ধারায় নোটিস দেয় পুরসভা। এতে বিপজ্জনক বাড়ি খালি করে সংস্কার করতে বলা হয়। কাজ না হলে এর পরে ৪১১(২) ধারায় কড়া পদক্ষেপের নোটিস দেওয়া হয়। তাতেও কাজ না হলে ৪১২(এ) ধারায় বাড়ির মালিককে মিউনিসিপ্যাল ট্রাইবুন্যালে ডাকা হয়। এই পথে কাজে উৎসাহ দিতে বেশ কিছু ছাড়ও দেয় পুরসভা। বাড়ি ভেঙে নতুন করে তৈরি করলে ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো’-র (এফএআর) ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয় মালিককে। বাড়ির মালিক ওই কাজ করতে না পারলে সুযোগ দেওয়া হয় ভাড়াটেকে। তার পরেও কেউ উৎসাহ না দেখালে সংস্থা লাগিয়ে কাজ করার কথা পুরসভারই। কিন্তু, মালিকপক্ষকেই খরচের বিষয়টি দেখতে হবে। যদিও ‘দ্য ক্যালকাটা হাউজ়ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন'-এর সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রক্ষিত বললেন, ‘‘কিছুতেই কিছু হবে না। ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রেমিসেস টেন্যান্সি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ অনুযায়ী, বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে মেন্টেনেন্স বা সংস্কারের খরচ নেওয়ার কোনও ধারণাই ছিল না। ১৯৯৭ সালে আইন সংশোধন করে সংস্কারের খরচের বিষয়টি আনা হয়। ঠিক হয়, বাড়ি ভাড়ার ১০ শতাংশ সংস্কার খরচ হিসাবে দিতে হবে ভাড়াটেকে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ পুরনো বাড়ির ভাড়া কোথাও ২০, কোথাও ৩০, কোথাও ১০০ টাকা। খুব বেশি হলে ৫০০। এখন ৫০০ টাকার ১০ শতাংশ মানে ৫০ টাকায় কি আদৌ সংস্কারের কাজ করা সম্ভব?’’ সুকুমারের দাবি, এই আইনের সংশোধন না হলে কোনও ভাবেই পুরনো বাড়ির বিপদ কাটানো যাবে না।

কলকাতার মেয়র হিরহাদ হাকিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ির জন্য পুর আইনের সংশোধনীর প্রস্তাব ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে মানুষকেই সচেতন হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Former Mayor Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE