— ছবি সংগৃহীত
জলজ্যান্ত মানুষটাকে সরকারি ওয়েবসাইট মৃত ঘোষণা করে দিয়েছিল!
বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে বিদেশে থাকা আত্মীয়দের। তাঁরা ফোন করে হাসপাতালে খোঁজ নিতে জানা যায়, নিজের বিছানায় দিব্যি বসে ফল খাচ্ছেন ৭৯ বছরের কানাইলাল চট্টোপাধ্যায়।
সল্টলেকের যে হাসপাতালে ওই রোগী ভর্তি, সেই হাসপাতাল ও রাজ্য সরকারের উপরে বেজায় চটে গিয়েছেন তাঁর আত্মীয়েরা। যদিও বুধবার সন্ধ্যায় যে সরকারি ওয়েবসাইটের কারণে কানাইলালবাবুর ‘মৃত্যু’ ঘটেছিল, বৃহস্পতিবার নববর্ষের দিন তাঁর সম্পর্কে সেই তথ্যই তুলে নিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের ওয়েবসাইটটি।
রাজ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি কোভিড রোগীদের সম্পর্কে তথ্য আপলোড করা হচ্ছে এই ওয়েবসাইটে। যাতে বাড়িতে বসেই আত্মীয়েরা রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পারেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কানাইলালবাবুর নাম দিলে ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, তাঁর সম্পর্কে কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। আর বুধবার সন্ধ্যায় তারাই জানিয়েছিল, ‘দুঃখের সঙ্গে জানানো হচ্ছে যে রোগী মারা গিয়েছেন’।
কানাইলালবাবুর শ্যালক দেবাশিস ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, সল্টলেকের বাসিন্দা তাঁর দিদি ও জামাইবাবু নিঃসন্তান। কানাইলালবাবুর ভাইপো-ভাইঝিদের অনেকেই আমেরিকায় প্রবাসী। তাঁরাই সেই অর্থে কানাইলালবাবুদের দেখভাল করেন। গত ২২ মার্চ অসুস্থতা নিয়ে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। নিয়ম মেনে তখন কোভিড পরীক্ষা করা হয় এবং তার ফল নেগেটিভ আসে। কিছু দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে কানাইলালবাবুর ক্যানসার ধরা পড়ে। হাসপাতাল জানায়, ভর্তি রেখে দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন।
দেবাশিসবাবু বলেন, “জামাইবাবু কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসার ছিলেন। তিনি কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমার অধীনে। কিন্তু সল্টলেকের এই হাসপাতালে ওই বিমার অধীনে চিকিৎসার সুবিধা নেই। আমরা তাই বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে জামাইবাবুকে স্থানান্তরিত করব ঠিক করি। হাসপাতাল থেকে ছাড়ার আগে আবার কোভিড পরীক্ষা করানো হয়। গত শুক্রবার সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে।”
অগত্যা তাঁকে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, এর ফলে সল্টলেকের ওই হাসপাতালেই অন্তত ১৪ দিনের জন্য আটকে পড়েন জামাইবাবু। কোভিড রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে নিয়ম মেনে সরকারি ওয়েবসাইটে কানাইলালবাবুর শারীরিক অবস্থার কথা আপলোড হতে শুরু করে এবং বিদেশে বসে তাঁর ভাইপো-ভাইঝিরা নিয়মিত সেই ওয়েবসাইট দেখতে থাকেন। বুধবার আমেরিকা থেকে কানাইলালবাবুর স্ত্রীর কাছে ফোন আসে। কাঁদতে কাঁদতে এক ভাইঝি তাঁকে কাকার মৃত্যুসংবাদ জানান।
দেবাশিসবাবুর কথায়, “খবর পেয়ে হাসপাতালে যাই। নীচে রিসেপশনে বলা হলে, উপর থেকে খোঁজ নিয়ে জানানো হয়, জামাইবাবু ফল খাচ্ছেন।” তাঁর প্রশ্ন, “হাসপাতাল থেকে যে তথ্য সরকারকে দেওয়া হচ্ছে, সেটাই তো আপলোড করা হচ্ছে। তার মানে তো জলজ্যান্ত মানুষকে মৃত বলে হাসপাতাল সরকারকে জানিয়েছিল?”
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন দেবাশিসবাবুরা। বলেছেন, স্বাস্থ্য ভবনের কাছেও আলাদা অভিযোগ জানানো হবে।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy